চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের কাছে উপাচার্য, সহ–উপাচার্যের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিসংবলিত একটি লিখিত বিবৃতি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার দায় স্বীকার করে ১৪ আগস্টের মধ্যে চুয়েটের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম, সহ–উপাচার্য জামাল উদ্দিন আহমেদ ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মো. রেজাউল করিমকে পদত্যাগ করতে হবে। ১৫ আগস্টের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। নতুন উপাচার্য ও সহ–উপাচার্য নিয়োগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনবিরোধী পোস্ট করায় তড়িৎ ও কম্পিউটারকৌশল অনুষদের ডিন মোহাম্মদ শামসুল আরেফিনকে ডিনের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিতে হবে বলে দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি সাগরময় আচার্য, সাধারণ সম্পাদক বিজয় হোসেন, সহসভাপতি ইমাম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মাহমুদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হত্যাচেষ্টা ও হুমকিতে জড়িত থাকায় তাঁদের ছাত্রত্ব বাতিল করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তিন দফা দাবি ১৫ আগস্টের মধ্যে পূরণ না হলে একাডেমিক কার্যক্রমে না ফেরাসহ কঠোর কর্মসূচি প্রদানের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়েটের সমন্বয়ক ও পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজার রহমান মোহাব্বত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনেক ত্যাগ এবং জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন দেশ পুনর্গঠনের সময়। দেশের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়েরও পুনর্গঠন জরুরি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়েটের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি হৃদ্রোগের সমস্যায় ভুগছি। তাই ডাক্তারের পরামর্শে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি নিয়েছি। ছুটি শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
এ বিষয়ে সহ-উপাচার্য জামাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ওপর শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার যে অভিযোগ এসেছে, তা সত্য নয়। শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে না দিয়ে প্রয়োজনে তাদের নিরাপত্তার জন্য হলে তালা দিয়ে রেখে দিতে আমি উপাচার্যকে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।’
সহ-উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। আন্দোলন চলাকালে চুয়েটের যে তিন শিক্ষার্থী আটক হয়েছিলেন, তাঁদের ছাড়িয়ে আনতেও কাজ করেছি। আমি সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রবান্ধব আচরণ করি।’
ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কিছু সমস্যার জন্য গত ২৮ জুলাই আমি উপাচার্য বরাবর অব্যাহতিপত্র দিয়েছি। তবে এখনো অব্যাহতিপত্রের কোনো প্রত্যুত্তর আসেনি।’