ডেঙ্গু নিয়ে যত রোগী হাসপাতালে আসছেন, আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, হাসপাতালের বাইরে আরও পাঁচ গুণ ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর নিপসম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ: সামনের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তাঁরা এ কথা বলেন। পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এই সেমিনারের আয়োজন করে। জনস্বাস্থ্য–বিশেষজ্ঞ ছাড়াও সেমিনারে সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কীটতত্ত্ববিদ, টিকা–বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, গবেষক, সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ছিল প্যানেল আলোচনা, মুক্ত আলোচনার পাশাপাশি প্রশ্ন করার সুযোগ।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও বর্ষা দেরিতে এসেছে। গত বছরের মতো এ বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপ বিলম্বিত হতে পারে। যত রোগী দেখা যাচ্ছে, তার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি রোগী কমিউনিটিতে আছেন। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের কাজে স্কুল–কলেজ–মাদ্রাসাকে সম্পৃক্ত করা যায় কি না, তা ভাবা হচ্ছে। ২০ ধরনের অংশীজনকে নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচ কোটি মানুষের কাছে সচেতনতামূলক বার্তা গেছে।
রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে বছরে তিনবার মশা জরিপ হয়। এ বছরও জরিপ হয়েছিল। জরিপের ফলাফল প্রকাশের সময় বলা হয়েছিল, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার ঝুঁকি আছে। বাস্তবে হয়েছেও তা–ই। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন ৭৮ হাজার ২৮ জন এবং মারা গেছেন ৩৬৪ জন।
পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক শাহ মনির হোসেন বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের উপায় খোঁজা, চিকিৎসার উন্নতিতে পরামর্শ দেওয়া এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সুপারিশ করার জন্য এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রথম প্রবন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারি–বেসরকারি নানা পক্ষের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। কিন্তু বর্তমান দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে না যে আমরা একত্রে আছি। নির্বাচনের কারণে ডেঙ্গু ইস্যুটি পেছনে পড়ে গেছে। এতে দুর্যোগ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।’ বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন জাতীয় জরুরি অবস্থার মতো। ডেঙ্গুতে মৃত্যু দ্বিগুণ হওয়ার ঝুঁকি আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দ্বিতীয় উপস্থাপনায় নিপসমের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, মশানাশক ও লার্ভানাশক কার্যকারিতা হারিয়েছে। সেমিনারের শেষ পর্যায়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে ১০ দফা সুপারিশ বা করণীয় উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে আছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৌশলগত অগ্রাধিকার ঠিক করা, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দক্ষতা বাড়ানো, হাসপাতালে রোগী ব্যবস্থাপনায় সৃজনশীল উদ্যোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা চালু, মশারি বিতরণ, মশার ওপর নিয়মিত নজরদারি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গোটা সরকারব্যবস্থার সম্পৃক্ততা এবং জোরালো তদারকি ও নিয়মিত কাজের মূল্যায়ন।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, দেশে রাজনৈতিক কারণে একাধিকবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের ব্যাপারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হতে দেখা যায়নি।
মুক্ত আলোচনা পর্বের সঞ্চালক জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ডেঙ্গু বিষয়ে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর জানা যায়। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম শহিদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান।