ঈদযাত্রায় ৪০ শতাংশ নিহত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়

পবিত্র ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৩ দিনে (১১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত) দেশে ২৫১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৪ জন নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। যা মোট নিহত হওয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫১ শতাংশের বেশি। দুর্ঘটনায় ৯৯৮ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ সোমবার প্রতিষ্ঠানটি গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠায়।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে যানবাহনভিত্তিক নিহত হওয়ার চিত্রে দেখা যায়, ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ১০৪ জন নিহত হন। এরপর থ্রি-হুইলারের যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান- লেগুনা-টেম্পু) ৪৫ জন নিহত হন। এ ছাড়া বাসের যাত্রী ১১ জন, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ১৫ জন, প্রাইভেট কার- মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ২৪ জন নিহত হন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৭টি জাতীয় মহাসড়কে সংঘটিত হয়। এরপর ৯১টি আঞ্চলিক সড়কে, ২৮টি গ্রামীণ সড়কে, ৩২টি শহরের সড়কে ও ৩টি অন্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬৪টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১০৩টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৪৯টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ২৭টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৮টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনা ঘটা যানবাহনের সংখ্যা ৫৩৩। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি ঘটেছে দুপুরে ২৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১ শতাংশের বেশি। আর মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ২৭ এবং অন্য যানবাহনের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে চাপা বা ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৩২ শতাংশ দুর্ঘটনা।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর।
সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, প্রায় ২৯ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৭২টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। আর রাজধানী ঢাকায় ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ভালো ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদযাত্রায় রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছেন এবং প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ আন্তজেলায় যাতায়াত করেছেন। উত্তরবঙ্গগামী সড়কের চন্দ্রা ও টাঙ্গাইলে যানজট হয়েছে। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যানজট হয়েছে, তবে অসহনীয় মাত্রায় হয়নি। অনেক পরিবহনের মালিক যাত্রীদের কাছে থেকে বেশি ভাড়া আদায় করেছেন।

বিআরটিএ এই ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ট্রেনে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। টিকিট কালোবাজারি হয়েছে। নৌপথে স্বস্তি থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। ঈদের ফিরতি যাত্রায় বাস ও লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণগুলো তুলে ধরা হয়। সে অনুযায়ী দুর্ঘটনার কারণের মধ্যে আছে হয় ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক পরিবহন খাতের স্বার্থবাদী গোষ্ঠী সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত উদ্যোগগুলো বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে সড়ক পরিবহন আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি।