জামাল উদ্দিন হত্যা মামলা

২০ বছর পর কারাগারে গেলেন আসামি কাশেম

জামাল উদ্দিন চৌধুরী
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিএনপির নেতা জামাল উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণের পর হত্যা মামলার এক আসামি ২০ বছর পর কারাগারে গেছেন।

আসামির নাম আবুল কাশেম চৌধুরী ওরফে কাশেম চেয়ারম্যান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতেই জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এই মামলায় মোট সাক্ষী ৮৪ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

২০০৩ সালের ২৪ জুলাই রাতে নগরের চকবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তৎকালীন সহসভাপতি জামাল উদ্দিন অপহৃত হন। পরে তাঁর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জামাল উদ্দিন। তাঁকে ঠেকাতে ও কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। মুক্তিপণের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তাঁকে খুন করা হয়।

পরিবার জানায়, জামাল উদ্দিন অপহরণের ঘটনা ‘সাজানো নাটক’ বলে মন্তব্য করে পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই বছর পর অপহরণের ‘অন্যতম হোতা’ আনোয়ারা সদরের সাবেক ইউপি সদস্য মো. শহীদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে জেলার ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর পাহাড়ি এলাকা থেকে ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে র‍্যাব।

সিঙ্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়, কঙ্কালটি জামাল উদ্দিনের। এর আগে প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী, অপহরণকারী চক্রকে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিল পরিবার। কিন্তু জামাল উদ্দিনকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশের ৯ জন কর্মকর্তা। তদন্ত শেষ হতে লাগে সাড়ে তিন বছর। ২০০৬ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আনোয়ারার সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, তাঁর ছোট ভাই মারুফ নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে এবং ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এর বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদী। মামলার আসামি কালা মাহবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে মারুফ নিজাম ২০০৭ সালে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পান। ২০১১ সালে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে আসামিরা লিভ টু আপিল করেন। এটি খারিজের আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছায় ২০১৬ সালে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত সিআইডির দেওয়া ২০০৬ সালের অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন বাদীর নারাজি আবেদন খারিজ করে। ইতিমধ্যে মারা যান দুই আসামি। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। বর্তমানে মামলার ১৪ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন একজন। তাঁর নাম মো. আলমগীর। জামিনে আছেন ছয়জন। বাকিরা পলাতক।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার আসামি সুলতান ড্রাইভার জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, জামাল উদ্দিনকে কাঞ্চননগরের গহিন পাহাড়ে নিয়ে যান তিনি। জামাল উদ্দিনকে গুলি করে হত্যার আগপর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ছিলেন তিনি, কালা মাহবুব, লম্বা মাহবুব ও টেংরা ওসমান। কাশেম চেয়ারম্যানের নির্দেশে জামাল উদ্দিনকে হত্যা করা হয়।