জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে যারা মব ভায়োল্যান্স (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) করছে, যারা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে এবং যারা জোরজবরদস্তি করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বাংলাদেশের কোনো সংখ্যালঘু মানুষ ও যেকোনো শ্রেণির মানুষ যাতে নিপীড়নের শিকার না হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এসব দাবির কথা তুলে ধরেন। ‘৭১ থেকে ২৪ বিজয়ের লড়াই, ৫৩ বছরের সকল লড়াইয়ের স্মৃতি যাপনে পদযাত্রা’ শীর্ষক ওই কর্মসূচির আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
পদযাত্রা–পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ভারত এখানে (বাংলাদেশে) যে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে, সাম্প্রদায়িকতার যে উসকানি দিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সরকারের সঙ্গে যুক্ত যাঁরা আছেন, তাঁদের বলব, ভারতের বিরুদ্ধে হুংকার প্রদানই যথেষ্ট নয়, বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ভারতের সুনির্দিষ্ট যে প্রকল্প আছে, সেগুলো বাতিল করার ব্যবস্থা করতে হবে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অনেকে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন কিন্তু রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, যেটা বাংলাদেশের সর্বনাশ করছে, সেটা বাতিল করার কথা বলছেন না। আমরা সেটা বাতিল করার দাবি জানাই। অনেকে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন কিন্তু যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করছে, সেই রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, রাশিয়ার ঋণে করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটা ভারতের ব্যবস্থাপনায় নির্মিত হচ্ছে। ভারতের আধিপত্য এই রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মধ্য দিয়েও আসছে। ভয়াবহ ভয়ংকর এই প্রকল্পও বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। এ সময় সীমান্ত হত্যা বন্ধ করারও দাবি জানান তিনি।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আবারও প্রমাণ করেছে যে সর্বজনের বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার যে আকাঙ্ক্ষা, তাতে তারা কখনো হাল ছাড়েনি। সেই লড়াই অব্যাহত আছে। সেই লড়াই অব্যাহত রাখার বার্তা নিয়ে এই পদযাত্রার আয়োজন করেছি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম নিয়ে নরেন্দ্র মোদির দেওয়া এক্স বার্তার কঠোর সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিবাদী বিজেপির নেতা নরেন্দ্র মোদি যতই বিকৃত করতে চেষ্টা করুক না কেন, ১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জনগণের যুদ্ধ। সেই জনগণের যুদ্ধে ভারতের জনগণ সহায়তা করেছিলেন, সেটা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে বাংলাদেশের মানুষ তাদের অধিকার সার্বভৌমত্ব তাদের সম্পদ ভারতের আদানি, আম্বানি কিংবা মোদির ইচ্ছেমতো তাঁদের কর্তৃত্ব তাঁদের প্রভুত্ব মেনে নেবে। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে এই দেশকে মুক্ত করার জন্য। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য সালমান সিদ্দিকী সমাবেশের সঞ্চালনা করেন। বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য বাকি বিল্লাহ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য সীমা দত্ত ও মাইকেল চাকমাসহ অনেকে।
এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রায় ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ঐতিহাসিক নানা ঘটনার চিত্র ফেস্টুনে ফুটিয়ে তোলা হয়। হাতে প্রদর্শন করা বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে পদযাত্রাটি বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়।