হল-মার্ক গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি ব্যাংকিং ইতিহাসের এক বিস্ময়কর ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিংব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করেন, তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করেন। তবে সংশ্লিষ্ট আইনে এই অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তাই নয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় করা মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার রায়ে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাসেম আজ মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এই নয়জনকে পাঁচ কোটি টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাকি আট আসামি হলেন তানভীরের স্ত্রী হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা হল-মার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, নকশী নিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল মালেক, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল) শাখার সাবেক সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন।
বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া আট আসামি হলেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিজউদ্দিন, এজিএম কামরুল হাসান খান, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার। তাঁদের মধ্যে জামাল উদ্দিনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকিদের ১৭ বছর করে কারাদণ্ড।
জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলা করে দুদক।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল) শাখা থেকে হল-মার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দায় (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
তদন্ত শেষে পরের বছর ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ১১টি মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তাঁর ভায়রা তুষার আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়।
পরে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এই ১১টি মামলা বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ বদলি করা হয়। আজ একটি মামলায় রায় ঘোষণা করা হলো। বাকি মামলা বিচারাধীন।