বৈধ পথে প্রবাস আয় পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের অ–আর্থিক সুবিধা ও প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে কমিটির কাছে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছে অর্থ বিভাগ। তবে এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ২৪ এপ্রিল সংসদীয় কমিটি বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় প্রেরণে গতি আনতে চলমান আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি অ-আর্থিক প্রণোদনা দিতে বলেছিল। এ লক্ষ্যে প্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিতে বিশেষ স্মার্ট কার্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছিল তারা।
আজ বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রবাস আয় বাড়ানোর জন্য রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের অ-আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ধীর হয়ে যাওয়া প্রবাস আয়ের গতি বাড়াতে নতুন নীতি-সহায়তা দেওয়া হলে তা ফলপ্রসূ হতে পারে।
প্রবাসীদের যেসব সুবিধা দেওয়া যেতে পারে বলে অর্থ বিভাগ মনে করে, তার মধ্যে আছে—রেমিট্যান্স প্রেরণকারী স্থায়ীভাবে দেশে ফিরলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সেবা প্রদানকারী অফিসে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। দেশের বিমানবন্দরগুলোয় যথাযথ অভ্যর্থনা এবং ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার জন্য বিশেষ ডেস্ক স্থাপন করা যেতে পারে। রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ স্মার্ট কার্ড দেওয়া। রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বাংলাদেশের যেকোনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। সরকারি কার্যালয়ে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া যাঁরা প্রবাস আয় পাঠান, তাঁদের সন্তানদের জন্য সরকারি–বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা ব্যবস্থা প্রচলন, ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের ফি কমানো, পাসপোর্টসহ দূতাবাসে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স কার্ডধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা মনে করে, বিদ্যমান আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি এ ধরনের অ-আর্থিক সুবিধা দেওয়া হলে, তা প্রবাসী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, যা ভবিষ্যতে তাঁদের আরও বেশি হারে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে পারে।
বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে অ-আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রবাসীদের জন্য সরকারের দেওয়া স্বল্প সুদে ঋণ ও অন্য সুবিধাদি যেন তাঁরা সঠিকভাবে পান, সে জন্য প্রচারণা বাড়ানোর সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।
কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, এম এ মান্নান, এ কে আব্দুল মোমেন, আহমেদ ফিরোজ কবির, মো. আবুল কালাম আজাদ ও রুনু রেজা বৈঠকে অংশ নেন।