সড়ক পরিবহন আইনে পরিবহনব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সড়ক ব্যবহারকারীদের আচরণগত ঝুঁকির বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে নেই। এ ছাড়া এই আইনে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় উপেক্ষিত রয়েছে। সীমাবদ্ধতা আছে আরও কিছু ব্যাপারে। তাই সড়কের নিরাপত্তায় একটি পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন।
রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’-এর প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা মোর্চা রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ।
এতে সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন ‘নিরাপদ সড়ক বানানো, এ বিষয়ে আইন তৈরি করা এবং আইনের বাস্তবায়ন—সবই সরকারের কাজ। তাদের হাতেই সব ক্ষমতা। আমরা শুধু সচেতন করতে পারি। কিন্তু ৩২ বছর ধরে আমরা বলেই যাচ্ছি, তারা শুনছে না। আমি ভিক্ষার ঝুলি (দাবি আদায়ের) নিয়ে বারবার গিয়েছি, কিন্তু কোনো সরকার এই ঝুলি ভরেনি। সড়কের মাফিয়ারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস করে এবং সাধারণ চালক ভাইদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে। এই ভাইদের উন্নয়ন হলে সড়কের উন্নয়ন হতো। তাতে মানুষের মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার কমে যেত।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক সেলিম মাহমুদ চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষের নিহত ও আহত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, যা প্রকারান্তরে অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে বিশাল চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। বিআরটিএর হিসাবমতে, প্রতিবছর দেশে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। ১০ হাজারের বেশি বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয় এবং পঙ্গুত্ববরণ করে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি (আনুমানিক ৩১ হাজার ৫৭৮ জন)। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা শুধু বাস, ট্রাক নিয়ে কথা বলি। অথচ বিশ্বব্যাপী বলা হচ্ছে, পরিবহনের জন্য বাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে মেট্রোরেল, ওয়াটার বাসসহ অন্যান্য যানবাহনকে সর্বসাধারণের আওতাভুক্ত করতে হবে। বহুমুখী ব্যবস্থায় পরিবহনের মানুষও ভাগ হবে। মানুষের চাপ কমলে দুর্ঘটনাও কমবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিআইপিআরবির রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কাজী বোরহান উদ্দিন, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনএনআরসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম বজলুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. ওয়ালী নোমান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রকল্প কর্মকর্তা (রোড সেফটি) মো. শরাফাত ই আলম, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের যোগাযোগ কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান প্রমুখ।