মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশ, ভারতসহ কয়েকটি দেশকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ইতিবাচক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ায় তিনি এসব দেশকে ধন্যবাদ জানান। খবর আল-জাজিরার
আজ বুধবার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করছে মিয়ানমার। ১৯৪৮ সালের এদিনে দেশটি ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিল। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের ভাষণ প্রচার করা হয়।
ভাষণে মিন অং হ্লাইং তাঁর দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য কিছু দেশের সমালোচনা করেন। বিপরীতে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ায় ধন্যবাদ দেন চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওস ও বাংলাদেশকে। জান্তাপ্রধান বলেন, ‘আমি কিছু দেশ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। নানা সমালোচনা, চাপ, হামলার মধ্যেও এসব দেশ ও সংগঠন আমাদের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিচ্ছে।’
বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কিছু বলেননি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গাকে স্বভূমিতে ফেরাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। পরে চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি হয়েছিল। তবে এই সংকটের চার বছরেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। উল্টো রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে রাজধানী নেপিদোয় স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে ভাষণ দিতে গিয়ে আজ বুধবার জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারে বহু দলের অংশগ্রহণে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন। তবে কবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। জান্তাপ্রধান বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে।
এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ৭ হাজার ১২ জন কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এসব বন্দীদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন কি না, তা জানা যায়নি। অন্যদিকে স্বাধীনতা দিবসে রোহিঙ্গাবিরোধী আলোচিত-সমালোচিত বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন উইরাথুসহ শতাধিক ব্যক্তিকে সম্মানজনক ‘থাইরি পিয়ানছি’ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দিয়েছে জান্তা সরকার। মিয়ানমারের ‘ঐক্যের জন্য অসামান্য ভূমিকা রাখায়’ তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ কারণে দেশটিতে দেখা দেয় রাজনৈতিক সংকট ও জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ। এর পর থেকে মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভ দমনের নামে চলছে জান্তার দমন-পীড়ন। প্রাণ গেছে হাজারের বেশি মানুষের। জান্তার হাতে বন্দী আছেন দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চিসহ অনেক রাজনীতিক।