সকাল থেকে খুলনায় বৃষ্টি হয়েছে। মাঘের শীত ও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজে বের হয়েছেন মানুষ। গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় খুলনা শহরের বাস্তুহারা এলাকায়
সকাল থেকে খুলনায় বৃষ্টি হয়েছে। মাঘের শীত ও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজে বের হয়েছেন মানুষ। গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় খুলনা শহরের বাস্তুহারা এলাকায়

বাড়তে পারে শীত, বৃষ্টির পূর্বাভাস

মাঘের শীতে গতকাল বৃহস্পতিবার কষ্টের মাত্রা বাড়িয়েছে বৃষ্টি। খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের দক্ষিণের নানা স্থানে অনেক সময় ধরে বৃষ্টি হয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতেও। এতে মানুষের কষ্ট বেড়েছে।

পুরো রংপুর বিভাগসহ গতকাল ১০ জেলায় বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সরকার আগেই ঘোষণা করেছিল, কোনো এলাকায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে চার জেলায় স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ হলেও প্রাথমিকের ক্লাস চলেছে। আবার কোনো স্থানে শিক্ষার্থীরা স্কুলে উপস্থিত হওয়ার পর ক্লাস বন্ধের ঘোষণা পেয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ শুক্রবার শৈত্যপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়তে পারে। আর সেই সঙ্গে পাঁচ বিভাগের দু–এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। রাতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত তাপমাত্রা আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ শীত থাকছে আরও কয়েক দিন।

দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি যে হবে তা আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় বৃষ্টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় যশোরে, ২২ মিলিমিটার। আর চুয়াডাঙ্গায় ২০ ও সাতক্ষীরায় ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

বৃষ্টিতে এসব এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীদের। গত বুধবার সন্ধ্যায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখার কোনো ঘোষণা না এলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধের প্রভাব পড়ে সেখানে। এতে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ শুক্রবার শৈত্যপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়তে পারে। আর সেই সঙ্গে পাঁচ বিভাগের দু–এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। রাতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত তাপমাত্রা আর বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম।

চুয়াডাঙ্গা শহরের মল্লিকপাড়ার ওল্ড জে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৪০ জন। গতকাল সকালে ক্লাস শুরুর নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পরও একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেনি। প্রাক্‌–প্রাথমিকের ২০ শিক্ষার্থীর সবাই ছিল অনুপস্থিত। বিদ্যালয়ের মোট ১৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল মাত্র ১০ জন।

শৈত্যপ্রবাহের কারণে কুড়িগ্রামের স্কুলগুলো বন্ধ ছিল। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে, ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুরে ১০ দিন ধরে টানা শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এ জেলার প্রাথমিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণার বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল এখনো বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রোববারও যদি এমন শীত থাকে, তাহলে স্কুল বন্ধ থাকবে।’

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসায় গতকাল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শ্রেণির পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এই নির্দেশনা পেতে দেরি হওয়ায় পাঠদান শুরুর পর জেলার বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে বেলা পৌনে ১১টা থেকে সোয়া ১১টায়।

গতকাল রংপুর বিভাগের সব কটি জেলা এবং কিশোরগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ এসব অঞ্চল তো বটেই আরও নতুন নতুন এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের পরিধি বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পরিস্থিতির পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই অনুযায়ী আজ খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের দু–এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও তা অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, আজ রাতে তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে। তাতে শীত আরও বাড়বে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত এমনটাই চলবে। এরপর তাপমাত্রা একটু বাড়লেও শীত মাসজুড়েই থাকবে।