সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন চেম্বার আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শুনানির দিন ধার্যের জন্য চেম্বার আদালতে আবেদন নিয়ে যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। আদালত বসেন বিচারপতির বাসভবনে। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চেম্বার আদালত লিভ টু আপিল আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন নির্ধারণ করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রোববারের কার্যতালিকায় রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর করা দুটি লিভ টু আপিল শুনানির জন্য তিন নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
এর আগে আজ বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘোষণা দিতে বলেছেন যে আগামী ৭ আগস্ট যে মামলাটি শুনানির কথা ছিল, সেই মামলার শুনানি এগিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিতে। আমি সে মর্মে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছি যে আগামী রোববার তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে আবেদন করবেন, যাতে মামলাটির শুনানির তারিখ তাঁরা এগিয়ে আনেন।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত) কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাত সন্তান। চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট নির্দেশনাসহ ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আপিল বিভাগে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ১০ জুলাই আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। আদেশে লিভ টু আপিল দায়ের করা পর্যন্ত কোটার বিষয়ে (সাবজেক্ট ম্যাটার) সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের রায় সে সময় পর্যন্ত অকার্যকর থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে শুনানির জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন রাখেন।
এরপর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ১৪ জুলাই প্রকাশিত হয়। এই রায়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল ও অন্যান্য কোটা (জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, যদি অন্যান্য থাকে) বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে উল্লেখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এই রায় কোনো বাধা তৈরি করবে না বলে উল্লেখ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল দায়ের করে।
আর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ দুই শিক্ষার্থী লিভ টু আপিল দায়ের করেন। তাঁদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে। এতে হাইকোর্টের রায় বাতিল বা সংশোধন চাওয়া হয়েছে।