বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির ‘গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে’ গণসংগীত পরিবেশনায় বাধা দেওয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সোমবার উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে উদীচীর বরগুনা জেলা সংসদকে জাগরণী সংগীত পরিবেশনার আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে যে গানটি গাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, সেটি হলো ‘এমন দ্যাশে জনম মোদের, বলিবো কী আর ভাই/ এক বেলাতে ভাত জোটে তো, অন্য বেলায় নাই।’ আগের দিন রোববার বিকেলে বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে গানটির চূড়ান্ত মহড়া চলছিল। সে সময় জেলা শিল্পকলার কালচারাল অফিসার গানটি গাওয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দেন। এর প্রতিবাদে উদীচীর বরগুনা জেলা সংসদ গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘উদীচী মনে করে, এই গানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বরগুনার জেলা কালচারাল অফিসার গর্হিত অপরাধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশে, এমন ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করে উদীচী।’
গান গাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে অবিলম্বে বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা তানজিলা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রোববার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবের চূড়ান্ত মহড়ায় উদীচীর দলীয় পরিবেশনার একটি গান নিয়ে আপত্তি ওঠে। সেখানে উপস্থিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তাক আহমেদ, মনোয়ার হোসেনসহ আমি নিজেও মতপ্রকাশ করি যে গানটির কিছু কথা আপত্তিকর। তাঁদের বলা হয়, আপনারা আপনাদের এই গান নিজেদের প্ল্যাটফর্মে করতে পারেন, কিন্তু শিল্পকলার প্ল্যাটফর্মে দয়া করে অন্য গান করেন। কারণ, আমরা ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর।
গানটির কিছু কথা এমন, “এমন দ্যাশে জনম মোদের, বলিবো কী আর ভাই/ এক বেলাতে ভাত জোটে তো, অন্য বেলায় নাই।”’
গানটির বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি, শুধু অন্য গান করার অনুরোধ করেছিলেন বলে জানান তানজিলা আক্তার। তিনি বলেন, ‘তাঁদের অনুরোধ করা হয়, যেহেতু এটি গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব, সেহেতু আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী কোনো গান কিংবা অন্য কোনো বিপ্লবী গান পরিবেশন করেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জেলা প্রশাসন বরগুনা এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, সচিব, পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করি। তাঁরাও এই গান গাইতে মানা করেন। এ ছাড়া বরগুনার গণ্যমান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হয় যে এই গান করতে দেওয়া যায় কি না, তাঁরাও মতপ্রকাশ করেন, গানটি গাইতে দেওয়া যায় না। পরে তাঁদের দিয়েও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীকে অনুরোধ করা হয় অন্য গান করানোর জন্য। পরে তাঁরা আমাকে জানান যে এই গান গাইতে দিলে তাঁরা অনুষ্ঠান করবেন, নাহলে তাঁরা অনুষ্ঠান বর্জন করবেন।’