ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলায় গত ১৫ বছরে কত মৃত্যু ঘটেছে, অনুসন্ধান করে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (স্বাস্থ্যসেবা) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ আদেশ দেন।
‘লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরল না আয়ান: খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু’ শিরোনামে ৮ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ ৯ জানুয়ারি একটি রিট করেন। রিটে আবেদনকারী হিসেবে শিশুটির বাবা শামীম আহমেদ যুক্ত হন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার পর পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেওয়া হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে খতনা করতে আসা আয়ানের মৃত্যুসংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান প্রতিবেদন এসেছে বলে আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে রাষ্ট্রপক্ষকে দাখিল করতে এক দিন সময় (নট টুডে) দেন আদালত। এদিকে গত ১৫ বছরে চিকিৎসায় অবহেলায় ইউনাইটেড হাসপাতালে কতগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন তুলে ধরে রিট আবেদনকারীপক্ষ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ। রিটের পক্ষে আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। শুনানির সময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় প্রথম আলোকে বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে দাখিল করতে এক দিন সময় দিয়েছেন আদালত। হলফনামা করে জমা দেওয়া হবে। এর ওপর কাল সোমবার শুনানি হতে পারে। গত ১৫ বছরে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে কতগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে—এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে তিন মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রিটে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ ডিসেম্বর খতনার জন্য আয়ানকে সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার অভিভাবক। সকাল ৯টার দিকে শিশুটিকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। তবে অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেসথেসিয়া’ (জেনারেল) দিয়ে চিকিৎসক আয়ানের খতনা করান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে জ্ঞান না ফেরায় তাকে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।