গতকাল রাতে ফোন দিয়ে ওয়াসার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধনে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। তবে মানববন্ধনে ওয়াসার স্থায়ী কর্মীদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না। যাঁরা মানববন্ধনে অংশ নেন, তাঁদের অধিকাংশই তাকসিম এ খানের আমলে চুক্তিভিত্তিক ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি থাকার সংবাদকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা’ দাবি করেছেন তাঁরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ওয়াসা ভবনের সামনের সড়কে এক মানববন্ধনে তাঁরা এসব কথা বলেন।
‘ঢাকা ওয়াসার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ’–এর ব্যানারে দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা ওয়াসার কনফারেন্সকক্ষে সভা করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। সংস্থার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কর্মীরা মিথ্যা, বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের প্রতিবাদ জানান। এমন প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। ওই সভায় আজ সকালে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গতকাল রাতে ফোন দিয়ে ওয়াসার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধনে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। তবে মানববন্ধনে ওয়াসার স্থায়ী কর্মীদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না। যাঁরা মানববন্ধনে অংশ নেন, তাঁদের অধিকাংশই তাকসিম এ খানের আমলে চুক্তিভিত্তিক ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত।
মানববন্ধনে একটি প্রতিবাদলিপি পড়ে শোনানো হয়। তাতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসাকে ধ্বংসের লক্ষ্যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাকসিম এ খান ওয়াসায় যোগদানের পর থেকেই দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার। যেকোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। পানিসংকট, ঋণগ্রস্ত ও আর্থিক অনটনে জর্জরিত ঢাকা ওয়াসা তাকসিমের নেতৃত্বে স্বাবলম্বী ও টেকসই হয়েছে।
‘ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে গত সোমবার প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একটি-দুটি নয়, ১৪ বাড়ি! দেশে নয়, সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কিনেছেন এসব বাড়ি। সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তত্ত্বতালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে দুটি অভিযোগ সম্প্রতি দুদকে জমা পড়েছে।
এই প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে গত মঙ্গলবার কয়েকজন সাংবাদিককে ঢাকা ওয়াসায় নিজের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে কথা বলেন তাকসিম এ খান। তখন তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর পরিবারের মাত্র একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানে ১৪টি বাড়ি থাকার যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। তিনি বলেছিলেন, ‘শুধু একটি বাড়ি রয়েছে, সেটি আমার স্ত্রীর কেনা। এর বাইরে কোনো বাড়ি নেই।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তাকসিম এ খানের বাড়ি–গাড়ি আছে কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এক যুগের বেশি সময় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন তাকসিম এ খান। তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তিনি প্রায় প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময় সেখানে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেও তাঁর ওয়াসার এমডির দায়িত্ব পালনের ইতিহাস রয়েছে। গেল বছরও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে ওয়াসার দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করলে তা অনুমোদন করেনি ঢাকা ওয়াসা বোর্ড।
ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিম এ খানের বেতন বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা রয়েছে। তাকসিম ২০০৯ সালে ওয়াসার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর মাসিক বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে দুই লাখ টাকা। এই বৃদ্ধির পর ওয়াসার এমডি হিসেবে তাঁর মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। তাকসিমের পর যাঁরা ওয়াসার এমডি হবেন, তাঁরা যেন এ পরিমাণ বেতন না পান, তা নিশ্চিত করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।