পুরান ঢাকার উৎসব সব সময়ই জাঁকালো। ধর্মীয় অথবা সাংস্কৃতিক সব রকম আয়োজনেই রয়েছে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। তবে দুই যুগ ধরে এখানকার উৎসব উদ্যাপনে পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত। শখের কবুতর ওড়ানো হয়ে উঠেছে এখন বাণিজ্যিক পেশা। পৌষসংক্রান্তির সাকরাইন উৎসবে ঘুড়ির চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে ডিজে পার্টির শব্দ। হারিয়ে যাচ্ছে গায়ে হলুদের দীর্ঘদিনের প্রচলন সোন্দা কোটাইয়ের মতো অনেক আনুষ্ঠানিকতা।
উৎসব–রীতির পরিবর্তন প্রসঙ্গে জানতে প্রথম আলো কথা বলেছে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, লালবাগ, কলতাবাজার, বকশীবাজার, গেন্ডারিয়া এবং উর্দু রোডের বিভিন্ন প্রজন্মের ১৬ জন বাসিন্দা, পঞ্চায়েত প্রধান এবং গবেষকদের সঙ্গে। তাঁরা বলছেন, অনেক উপকরণ এখন হাতের মুঠোয় বলে পরিবর্তন দ্রুত হচ্ছে। তবে সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য নথিভুক্ত হওয়া জরুরি। না হলে পরবর্তী প্রজন্ম ঐতিহ্যের কথা জানতেও পারবে না। যেমন বর্তমান প্রজন্মের অনেকে জানেই না সাকরাইন উৎসবে ঘুড়ি ওড়ানোর সঙ্গে ছিল আরও অনেক রকম রীতি, প্রথা।
বাংলা পৌষ মাসের শেষে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার থেকে শিংটোলা, শাঁখারিবাজার থেকে দয়াগঞ্জের আকাশের দখল নেয় বাহারি সব নামের রঙিন ঘুড়ি। বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে শোনা যায় ‘ভোকাট্টা’ অথবা ‘বাকাট্টা’ শব্দ। এই উৎসব ঠিক কত শত বছর ধরে চলে আসছে বলা যায় না। পুরান ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ এই উৎসবকে চেনে সাকরাইন উৎসব নামে। তবে একসময় লালকুঠির ছাদেও এই উৎসব করতেন সূত্রাপুরের তরুণেরা। সে অংশটি ভেঙে ফেলায় এখন আর ওখান থেকে ঘুড়ি ওড়ানো হয় না বলে জানালেন সূত্রাপুরের পঞ্চায়েত প্রধান এবং ঢাকা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আজিম বখশ।
সূত্রাপুরের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী মমতা রানী সরকার বললেন, সাকরাইনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গৃহস্থালি আচার-পার্বণগুলো হারিয়ে যাওয়ার কথা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন ‘আমাদের শৈশবে দেখা ঢাকার নবাবপুরের সাকরাইন ছিল আরেক রকম। ভাইদের সঙ্গে ঘুড়িতে মাঞ্জা দেওয়া তো ছিলই। তবে মায়ের সঙ্গে বসে পিঠাও বানাতে হতো। ভোরবেলা কাঁচা হলুদ আর কমলার খোসা বেটে স্নান করতে হতো। এসব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল গৃহস্থালি সম্পর্ক। এখন সবই প্রস্তুত থাকে দোকানে।’
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি ওড়ানোর সংখ্যা কমেছে বলে জানালেন পুরান ঢাকার কলতাবাজারের বর্ষীয়ান ঘুড়িয়াল মো. হাসমত আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন ‘আগে এ উৎসবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার ঘুড়ি বানাতেন। এখন সেটা ১০ হাজারে নেমে এসেছে।’
সাকরাইন উৎসবে দুই দশক ধরে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ডিজে পার্টির (ডিস্ক জকি) উচ্চস্বরের গান। এ নিয়ে যেমন স্থানীয় বাসিন্দারা বিরক্ত হচ্ছেন, তরুণদের মধ্যে রয়েছে আবার উদ্দীপনা। ১৫ বছর ধরে সাকরাইন উৎসব পালন করে আসছে লক্ষ্মীবাজারের একটি তরুণ সংগঠন ‘মাঞ্জা’। দিনে ঘুড়ি ওড়ানো আর বিকেল থেকে তাদের সাকরাইন উৎসবে যুক্ত হয় ডিজে গান। মাঞ্জার সদস্য লক্ষ্মীবাজারের আরমান হোসেন প্রথম আলোকে জানালেন ‘ঘুড়ি ওড়ানো হয় বাড়ির ছাদে। মুখে আগুন দিয়ে মশাল জ্বালানোর আয়োজন এখনো আছে। তবে জমকালো উৎসবটা হয় বিকেল থেকে, গানের। ডিজেদের ভাড়া করে আনা হয়। তবে উৎসবের সময় ডিজে পার্টির খরচ বেড়ে যায়। কেউ কেউ লাখ টাকার ডিজেও আনে। অধিকাংশ সময় এ উৎসবে খাওয়া হয় বিরিয়ানি। স্থানীয় বড় ভাইরা হয়তো কেক নিয়ে এলে কেক কাটা হয়।’
বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির পুরান ঢাকার আকাশে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতর উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা যায়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে জিন্দাবাহারে হাফিজ মিঞা দর্জি রোজ ভোরে মগ্ন হয়ে থাকতেন নিজের কবুতর নিয়ে। কবুতর উড়ে ফিরে এলে হাত বুলিয়ে দিতেন ওদের পিঠে। পরিতোষ সেন জিন্দাবাহার বইয়ে ‘দর্জি হাফিজ মিঞা’ পরিচ্ছেদে লিখেছিলেন ‘নিছক উড়ে বেড়াবার এক রকম নির্ভেজাল আনন্দ পাওয়ায় পক্ষিজগতে পায়রার জুড়ি বোধ হয় আর তেমন নেই। ডানায় ভর করে প্রহরের পর প্রহর শূন্যে ভেসে বেড়াতে চিল-শকুনদেরও তুলনা নেই। কিন্তু সেই ডানায় না আছে ঝাপটা, না আছে উচ্ছলতা।’
সেই ঝাপটা মেশানো, উচ্ছলতা মেশানো কবুতরেরা ছিল ভালোবাসার, ছিল শখের। মুসল দর, কাগজি, চিলা, গোররা অথবা চুইনা প্রজাতির নানা রকম পোষা কবুতরের জন্য সেই ভালোবাসা বদলে এখন এসেছে তাদের নিয়ে রেস করে বিজয়ের আনন্দ। এখন পুরান ঢাকার কবুতরকে কেন্দ্র করে চলছে বিশাল বাণিজ্যিক চর্চা। প্রতিটি মহল্লায় রয়েছে কবুতর ওড়ানোর প্রতিযোগিতার ক্লাব। কবুতরের মালিককে সেই ক্লাবের সদস্য হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। বাজিতে জিতে আনন্দ পেতে এবং আরও বেশি দামে সেই কবুতরটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিতে তাঁরা কবুতর কেনেন এবং বড় করেন।
বাংলাদেশ রেসিং পিজনস এন্টারপ্রেনারস লিমিটেড ক্লাবের সদস্য রাকিব হোসাইন প্রথম আলোকে বললেন ‘রেসে জিতে গেলে সে কবুতরের দাম অনেক গুণ বেড়ে যায়। যেগুলো ওপরে গিয়ে ডিগবাজি দিয়ে নিচে আসে এদের বলে টাম্বলার, কম দূরত্বে অনেক ওপরে যেতে পারে গিরিবাজ আর তুলনামূলক নিচু দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে রেসার পিজন। মূলত রেসার পিজন নিয়েই প্রতিযোগিতা হয়।’
গেন্ডারিয়ার সাজ্জাদ হোসেন শৌখিন কবুতর বিক্রি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বললেন ‘কবুতরকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য কেমন হতে পারে বুঝতে চাইলে কাপ্তানবাজারে শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থাকতে হবে। এখানকার প্রতি হাটে অন্তত ২০ হাজার মানুষ কবুতর কেনা বেচা করতে আসে। আগে মানুষ শখ করে ভালোবেসে পুষত, তখন কেউ কবুতর বিক্রি করতে চাইত না। তখনো প্রতিযোগিতা হতো কিন্তু তা ক্লাবভিত্তিক ছিল না। এখন হাজার হাজার রেসের দল আছে।’
পুরান ঢাকার বিয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক রীতিনীতিও বদলেছে। পুরান ঢাকার বিয়ে মানেই নানা রকম উপাচার আর আনুষ্ঠানিকতার ঘনঘটা। আগামসি লেন, নিমতলী, উর্দু রোড, বখশীবাজারের মুসলিম পরিবার হোক অথবা লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজারের সনাতন ধর্মাবলম্বী; সবার বিয়েতে ‘সোন্দা কোটাই’ ছিল বিবাহপূর্বক একটি আচারিক অনুষ্ঠান। এ তথ্য জানিয়ে পুরোনো ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষক শায়লা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন ‘কাহেলছিয়ায় (হামান দিস্তার মতো হাতে তৈরি মসলা কোটার যন্ত্র) করে হলুদ কুটে বিয়ের কনে এবং বরের গায়ে মাখানো কেন্দ্র করে এই আয়োজন হতো। সোন্দা কোটাইয়ের জন্য হলুদ কোটার আগে কাহেলছিয়ার গায়ে মুসলমানরা জাফরান দিয়ে আর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিঁদুর দিয়ে ফোঁটা দিতেন। হলুদ কোটা শেষ হলে সাত সোহাগানরা (সধবা নারী) সেই হলুদ পাতলা কাপড়ে চেলে নিত। তারপর তা ব্যবহার করো হতো গায়েহলুদের জন্য। এই প্রথা এখন পুরান ঢাকায়ও দেখা যায় না।’
‘উনিশ-বিশ শতকে পুরোনো ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতি’ বইয়ের লেখক, উর্দু রোডের বাসিন্দা শায়লা পারভীন আরও জানালেন, বিবাহযাত্রার সময় পালনীয় বেশকিছু রীতিসহ বদলেছে বিয়ের উপহারও। একসময় টাকা দিয়ে তোড়া বানিয়ে বিয়েতে উপহার দেওয়ার রীতি ছিল, যা আর এখন পুরান ঢাকায় দেখা যায় না। এ ছাড়া জনসংখ্যার বৃদ্ধির বিপরীতে মানুষের বাড়ির জায়গা কমে যাওয়ায় এখন সব অনুষ্ঠানই কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রিক হয় বলে অনেক রীতি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এমনকি মানুষের গান শোনার অভ্যাসেও পরিবর্তন আসছে। গান শোনার কথা বলতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হলেন এই উর্দু রোডের আরেক বাসিন্দা লেখক হুমায়রা হুমা। প্রথম আলোকে বললেন ‘গান শোনার অভ্যাস বদলেছে গত শতকের শেষ দিক থেকে। যখন ক্যাসেট প্লেয়ারের পরিবর্তে সিডি আসা শুরু হলো এবং ওয়াকম্যানে গান শোনার চল বাড়ল তখন থেকে। এখন সিডি, ওয়াকম্যান দুটোই হারিয়েছে। তখন মহল্লায় কেউ একজন ‘হাওয়া ম্যে উড়তা যায়ে’ অথবা ‘মেরা পিয়া গ্যায়ে রাঙ্গুন’ বাজালে পুরো এলাকায় সে শব্দ শোনা যেত। তারও আগে ছিল কলের গান। সেটা বাজত শৌখিন কোনো মানুষদের বাড়িতে। এখন যার যার পছন্দমতো মানুষ একা একাই গান শোনে। এর কারণ অনেক রকম প্রযুক্তির সুবিধা থাকা।’
গানের প্রসঙ্গে আসে পুরান ঢাকার বিখ্যাত কাওয়ালি আসরের কথা। একসময় পুরান ঢাকার বিভিন্ন দরগা থেকে শুরু করে যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানেও কাওয়ালির আসর বসত নিয়মিত। এখন তা প্রায় হারিয়েছে।
পুরান ঢাকার আরেক বিশেষ ঐতিহ্য কাওয়ালির আসর। ঈদ, চাঁদ থেকে বিয়ের আসর উপলক্ষে বসে যেত কাওয়ালির আসর। এ ছাড়া বিভিন্ন খানকায় নিয়মিত গাইতে আসতেন কাওয়ালরা। তাদের পেশাই ছিল কাওয়ালি গাওয়া। কিন্তু এখন সেই আসরের খবর আর পাওয়া যায় না বললেই চলে।
বকশীবাজার খানকা শরিফের কাওয়ালি আসরের চর্চা ৮০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। এই খানকা শরিফের একসময়ের প্রধান প্রয়াত শাহ সুফি হাফিজ মুহম্মদ জহুরুল হক মোবারকী আল কাদরী নিজেই ফার্সি ও উর্দু ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি কাসিদা, কাওয়ালি লিখেছেন। এখন এই আসর হয় কি না, জানতে যোগাযোগ করা হয় খানকার বর্তমান প্রধান শাহ সুফি সৈয়দ আনওয়ার মুবারকী আল কাদরীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন এ চর্চা এখন খুবই কম।
নতুন সুর, গান সে স্থান দখল করেছে জানিয়ে আনওয়ার মুবারকী আল কাদরী প্রথম আলোকে বলেন ‘আগে কাওয়ালির মেহফিল ছিল নিয়মিত। মেহফিলে উপস্থিত থেকে শুনলে যে মানুষের রুহানি প্রশান্তি হয়, তা কখনো মুঠোফোনে শুনে হয় না।’
কাওয়ালির ভক্তদের রুচি বদলাচ্ছে। কেউ কেউ মুঠোফোনে কাওয়ালি শুনে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু এ আসর নয় পুরান ঢাকার মানুষের মেহমানদারি করা বা সামাজিক যোগাযোগেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। একসময় মেহমান এ নেওয়াজী বলে একটা চল ছিল। আত্মীয়স্বজনের বাসায় খাবার পাঠানোর রীতি ছিল।’ আনওয়ার মুবারকী আল কাদরী মনে করেন, এখন মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় এসব রীতিনীতি উঠে যাচ্ছে।
কাওয়ালির আসরের মতো সমবেত হয়ে গান শোনার স্মৃতিচারণা করেছিলেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, পুরান ঢাকার নারিন্দা আর পাতলা খান লেনে তিনি শৈশব কাটিয়েছেন। গুণী এই শিল্পী প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের শৈশবে বিকেলবেলা এলাকার কোনো একটি বাড়িতে বসে স্থানীয় কিশোরী, মেয়েরা একসঙ্গে গান গাওয়ার চল ছিল, যা একসময় হারিয়ে যায়।
‘আলম মুসাওয়ার নামে এক শিল্পী, খুব সম্ভবত উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ঢাকার ঈদ ও মহররম মিছিলের ৩৯টি ছবি এঁকেছিলেন, যা রক্ষিত আছে জাতীয় জাদুঘরে’। মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘পুরানো ঢাকার উৎসব’ বইয়ে এমনটা বলা আছে। ঢাকার ধর্মভিত্তিক উৎসবগুলো সর্বজনীন ছিল। মহররম মিছিল অথবা রথ যাত্রার মিছিলে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষেরা অংশগ্রহণ করুন অথবা নাই করুন দর্শকের কাতারে ঠিক উপস্থিত হতেন। এমনকি তাঁরা বিভিন্ন দায়িত্বও পালন করতেন।
যেমন মহররমে ঢাকার ভিস্তিদের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে গেছেন ঢাকার পঞ্চায়েতের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক খান মোহাম্মদ আজমও। তিনি বর্ণনা করেছেন, ‘মহররমের সময় ঢাকার অনেক হিন্দু ও মুসলমান (সুন্নি ও অন্যান্য সম্প্রদায়) ভিস্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। প্রাচীনকাল থেকেই মহররমের ১০ দিন ভিস্তিরা নিজেদের সাময়িক পঞ্চায়েত গঠন করে। ‘পুরান ঢাকার উৎসব’ বইয়ের ১৯ নম্বর পৃষ্ঠায় এ তথ্য উল্লেখ করেছেন মুনতাসীর মামুন।
সরলানন্দ সেনের ‘ঢাকার চিঠি’ বইয়ের ভূমিকায় অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছিলেন ‘মন্দের সঙ্গে সঙ্গে ভালো দিকও আছে। মাতৃভাষার প্রতি প্রবল অনুরাগ, তার জন্য রক্তদান, ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব, হিন্দু-মুসলমানের যৌথ নির্বাচন চাওয়া, আধুনিক চিত্রকলার চর্চা, মিশ্র সংস্কৃতিকে বিশ্বাস...এমন অনেক তথ্য আছে, যা তখন আমাদের কাছে সুস্পষ্ট ছিল না। সবাইকে আমরা সাম্প্রদায়িকতাবাদী ভেবেছিলুম, ভেবে অবিচার করেছিলুম। সরলানন্দ বাবুর লেখা পড়ে বোঝা যায় অসাম্প্রদায়িক মনোভাব যথেষ্ট তৎপর ছিল।’
কিন্তু এখন আর সেই সৌহার্দ্য আগের মতো নেই। পুরান ঢাকার পরম্পরাগত ঐতিহ্য বদলে যাওয়া নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয় ইতিহাসবিদ, পুরান ঢাকার গবেষক মুনতাসীর মামুনের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন ‘প্রযুক্তি, উপকরণ এবং বাসিন্দাদের অবস্থানের জন্য পরিবর্তন আসছে। নতুন ঢাকা সম্প্রসারিত হচ্ছে, পুরান ঢাকার প্রজন্মের পরিবর্তন ঘটছে। এতে কঠিন হচ্ছে ধারাবাহিকতা রক্ষা। তবে সংস্কৃতির পরিবর্তনের ধারা রুখে দেওয়া যায় না। উৎসবের ঐতিহ্যগত গুরুত্ব থাকে বলে নথিভুক্ত হওয়া উচিত। এ কাজটি সংগঠক, গবেষকদের দায়িত্ব।’