চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে আছেন মো. রাসেল (৩২)। ভীষণ ক্লান্ত শরীর। কথা বলতেও কষ্ট হয় তাঁর। রাসেল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তবে এবারই প্রথম নয়, প্রায় আট মাস আগে একদফা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। এবার দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
রাসেলের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় রাসেল বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেছেন। স্ত্রী ও ছয় মাস বয়সী মেয়ে বাড়িতে থাকেন। তবে রাসেল থাকেন চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট এলাকার একটি মেসে। কাজের খোঁজে বছর পাঁচেক আগে চট্টগ্রামে আসেন তিনি। এরপর এখানেই থিতু হন।
আমার দুর্ভাগ্য, বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আট মাসের মধ্যে আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। বাড়িতে সবাই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছে। বৃদ্ধ বাবাকে আমার সেবা করার জন্য ছুটে আসতে হয়েছে।মো. রাসেল, চট্টগ্রামের ডেঙ্গু রোগী।
বর্তমানে রাসেল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তীব্র জ্বর নিয়ে গত শনিবার (১৫ জুলাই) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এর পর থেকে মেডিসিন বিভাগের বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই হয় তাঁর। ডেঙ্গুর চিকিৎসা চলছে।
গত রোববার (১৬ জুলাই) কথা হয় রাসেলের সঙ্গে। জানালেন, কয়েক দিন আগে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখন জ্বর আসে। অসুস্থ শরীর নিয়ে চট্টগ্রামে ফিরেছেন। এরপর একজন চিকিৎসক দেখান। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। বাসায় বিশ্রামে ছিলেন। শরীর বেশি খারাপ হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
রাসেল বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) প্লাটিলেট অনেক কমে যায়। পরীক্ষায় দেখা যায়, প্লাটিলেট ১৩ হাজারে নেমেছে। তখন সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে চলে এসেছি। আমার ধারণা, দেওয়ানহাটের বাসায় মশা কামড়েছে। ওখানেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি।’
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন রাসেল। তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর দিন দশেকের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বাসায় ফিরে যান।
চট্টগ্রাম নগরে রাসেল একাই থাকেন। এখানে দেখাশোনার কেউ নেই। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে ছুটে এসেছেন রাসেলের বাবা মোক্তার হোসেন। গতকাল সোমবার বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে শুয়ে রাসেল ঘুমাচ্ছেন। পাশে বসে আছেন বাবা মোক্তার হোসেন।
মোক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন হয়ে গেল রাসেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এখনো বেড (শয্যা) পায়নি। বারান্দায়, মেঝেতে চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। আরও কয়েক দিন থাকতে হবে বলেছেন। ছেলেকে দেখার কেউ নেই। তাই চলে এসেছি।’
ছেলের দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে মোক্তার হোসেন বলেন, ‘এ কেমন শহর, আট মাসের মধ্যে বুঝি দুবার ডেঙ্গু হয়!’
অন্যদিকে রাসেল বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য, বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আট মাসের মধ্যে আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। বাড়িতে সবাই চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। বৃদ্ধ বাবাকে আমার সেবা করার জন্য ছুটে আসতে হয়েছে।’
তবে সুখবর হলো, রাসেলের শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানালেন, গতকাল থেকে রাসেলের প্লাটিলেট বাড়তে শুরু করেছে। এখন আস্তে আস্তে সেরে উঠবেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ হতে বিশ্রাম নিতে হবে।
এদিকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৮০ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮০।
এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ১৮ জন মারা গেছেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই মাসে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯৯ জন। আর চলতি বছর মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৬৪ জন। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন পাঁচ হাজারের বেশি।