ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে রাজধানীতে এসে কাঁচা ধান, ভুসি, চাটাই বিক্রি করছেন মো. সুরজত আলী
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে রাজধানীতে এসে কাঁচা ধান, ভুসি, চাটাই বিক্রি করছেন মো. সুরজত আলী

সুরজত আলীর ৭ দিনের ঢাকা সফর

ষাটোর্ধ্ব মো. সুরজত আলীর শরীরে আর কুলোয় না। মাছের ব্যবসা ছেড়ে ১৬ বছর আগে ঢাকায় এসেছিলেন। দেড় বছর আগে সেই শহরও ছেড়ে যান। তবু দুটি বাড়তি পয়সা আয়, পুরোনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে যান্ত্রিক ঢাকায় সপ্তাহখানেকের জন্য সুরজত আলী ফিরেছেন।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের সুরজত আলী রাজধানীর পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালের পাশের ফুটপাতে কাঁচা ধান, ভুসি, চাটাই নিয়ে বসেছেন। ট্রেনে চেপে গত বুধবারে এসেছেন এখানে। আসার সময় ১০ কেজি পরিমাণ ভুসি আর ৫ কেজি চিড়া এনেছিলেন। কারওয়ান বাজার থেকে কিনেছেন কাঁচা ধান ও চাটাই। বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে চিড়া ভিজে গেছে। তাই বিক্রি করতে পারছেন না। সেই চিড়া শুকিয়ে এখন নিজেই খাচ্ছেন। ভুসি শেষ হয়েছে চার দিনেই। এরপর কারওয়ান বাজার থেকে আরও কিছু কিনে আনতে হয়েছে।

শমরিতার পাশের ফুটপাতে ডাব, পান, চা-সিগারেটের দোকান রয়েছে। সুরজত আলীও একসময় এখানে ডাব বিক্রি করতেন। ঢাকায় কবে এসেছেন, তা সালের হিসাবে বলতে না পারলেও জানান, ‘ফখরুদ্দিনের আমলে’ (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) ঢাকায় আসা তাঁর। এই শহরে থেকেই স্ত্রী, চার ছেলেসহ সংসার সামলেছেন।

ছেড়ে গেলেন কেন? সুরজত আলীর উত্তর, ‘আর কত? শরীরে কুলায় না।’ তবে আগের মতো ব্যবসাও হচ্ছিল না। তার ওপর ঢাকায় থেকে-খেয়ে বাড়িতে টাকা পাঠানোও কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তাই ফিরেই গেছেন। এখন অবশ্য, গফরগাঁওয়ে ফিরে তেমন কিছু করেন না। বড় দুই ছেলে কিছু আয়রোজগার করে, ছোট দুজন পড়াশোনা করছে। হালকা-পাতলা কোনো কাজ পেলে নিজ এলাকাতেই কিছু করবেন। দিনভর বসে থাকা বা ভারী কোনো কাজ এখন আর করতে পারেন না।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে মৌসুমি বিক্রেতা সুরজত আলীর বেচাবিক্রি খারাপ হয়নি বলে জানালেন। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত সব শেষ হয়ে যাবে বলে আশা তাঁর। এবারের পরিস্থিতি বুঝে আর শরীর ভালো থাকলে পরের বছর আবার আসবেন, এমনটাই আশা করছেন।

খাওয়া আর ঘুমের কথা বলতেই নিজের চোখ দেখিয়ে বললেন, ‘দেখেন চোখ লাল।’ এই কদিন ফুটপাতেই চাটাই বিছিয়ে রাত কাটিয়েছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে ঘুমাতে কষ্ট হয়েছে। আর দুই রাত কাটাতে পারলেই বাড়ি চলে যাবেন। ভাত একবেলা খান। বাকি সময় চিড়া খেয়ে থাকেন। পয়সা খুব বেশি খরচ করছেন না। আর দীর্ঘদিন এই এলাকায় থেকেছেন বলে অনেকই বন্ধুর মতো হয়ে গেছেন। তাঁরাও কেউ কেউ কখনো খাবার দেন। অনেক দিন পর তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েও সুরজত আলীর ভালো লাগছে।

কোরবানি দেওয়া হয়? এর সরাসরি উত্তর দেননি সুরজত আলী। বরং বললেন, অনেক আগে কষ্ট করে সাত শতাংশ জমি কিনেছেন। ছয়জনের সংসার। টানাটানি করে তাঁদের চালাতে হয়।

ঈদের দিন সকালেও কিছু ক্রেতা পাবেন বলে আশা করছেন। তাই পরদিন মঙ্গলবার বিকেলের ট্রেনে গফরগাঁওয়ে ফিরে যাবেন। ফেরার পথে ডাক দিয়ে সুরজত আলী জানালেন, মেজো ছেলে এক বাহিনীর চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন। ছেলের চাকরি যেন হয়, সেই দোয়া চাইলেন।