মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকেরা। দেশটিতে যাওয়ার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না পেয়ে এসব শ্রমিককে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। গ্রেপ্তার ও আটকও করা হচ্ছে। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকের সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে দুই দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান বিশেষজ্ঞরা। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় আছেন এ রকম বাংলাদেশি অভিবাসীরা অমর্যাদাকর এক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। তাঁদের যেকোনো সময় দেশে ফিরতে হতে পারে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার অন কনটেম্পরারি ফর্মস অব স্লেভারি তোমোয়া ওবোকাতা, স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার অন ট্রাফিকিং ইন পারসনস শিভন মেলালি, স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার অন দ্য হিউম্যান রাইটস অব মাইগ্রেন্টস জিহাদ মাদি এবং জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের পাঁচ বিশেষজ্ঞ রবার্ট ম্যাককরকুয়োডেল (চেয়ার-র্যাপোর্টিয়ার), ফার্নান্দা হোপেনহাম (ভাইস-চেয়ার), পিচামন ইয়েওপহানতং, দামিলোলা ওলাউইয়ি ও এলজবিয়েতা কারস্কা।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকেরা যে দুর্বিষহ মানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন, এ থেকে তাঁদের রক্ষায় মালয়েশিয়ার সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে এসব শ্রমিককে চাকরি ও কাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু দেশটিতে প্রবেশের পর দেখা যায় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না তাঁরা। কাজ না পেয়ে অনেক সময় তাঁরা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও মালয়েশিয়ায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে দেশটির কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তার, বন্দী, দুর্ব্যবহার ও দেশে প্রত্যর্পণের ঝুঁকিতে পড়েন তাঁরা।
চাকরির ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় অপরাধী চক্রগুলোর দ্বারা অভিবাসী শ্রমিকেরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এমন প্রতিষ্ঠানে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, যার কোনো অস্তিত্বই নেই। আর এই নিয়োগের জন্য এসব চক্রকে অর্থ দিতে গিয়ে ঋণের ফাঁদে পড়ছেন শ্রমিকেরা।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর অবসান হওয়া দরকার।
শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণায় জড়িত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় প্রতারণায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা এ নিয়ে কথা বললে প্রতিশোধ ও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। এসব ঘটনা তদন্তে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথভাবে অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগে মালয়েশিয়ার সরকারকে অবশ্যই শ্রমিকদের সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন মানবাধিকারের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এ-সংক্রান্ত জাতিসংঘের আইনকানুন মানতে মালয়েশিয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশটির অবশ্যই এসব মেনে চলতে হবে।
প্রতারণার শিকার অভিবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের চিহ্নিত করতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে মালয়েশিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। প্রতারণা ও পাচারের শিকার এসব শ্রমিকের সুরক্ষায় দেশের বিদ্যমান আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক আইন প্রয়োগ করতে মালয়েশিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়ে এর আগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত থেকেছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের এসব বিশেষজ্ঞ।