প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে ২৬ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত এ জরিপ চালানো হয়।
বর্তমান সময়ে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি কোনোভাবেই সমর্থন করেন না ৯৩ শতাংশ মানুষ। প্রথম আলোর অনলাইন জরিপে বিষয়টি উঠে এসেছে।
জরিপে প্রশ্ন করা হয়, ‘বর্তমান সময়ে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি সমর্থন করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে ৯৩ শতাংশ মানুষ ‘না’ বলেছেন। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি তাঁরা সমর্থন করেন না। জরিপে ‘না’ ভোট পড়েছে ৪৩ হাজার ৯৭৬টি।
জরিপে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ মনে করেন, বর্তমান সময়ে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি সমর্থনযোগ্য। জরিপে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ২ হাজার ৫৯৮টি।
জরিপে অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে ১ শতাংশ পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মত দেননি। জরিপে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’-এর পাশাপাশি ‘মন্তব্য’ নেই, এমন একটি ঘর ছিল। মন্তব্য নেই ঘরে ভোট দিয়েছেন ৮৭০ জন। ফেসবুকে পরিচালিত এ জরিপে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল।
গত ২৬ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে জনমত জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নিয়েছেন ৪৭ হাজার ৪৪৪ জন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়। শপথ নেওয়ার পর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অফিস করেছেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়।
অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর থেকে নানা ধরনের দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রতিদিন বিভিন্ন পক্ষ দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পাশাপাশি রাজধানীর শাহবাগ, প্রেসক্লাব ও সচিবালয় এলাকায়ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলতে থাকে। বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভের কারণে টানা কয়েক দিন রাজধানীতে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন।’
প্রধান উপদেষ্টা যেদিন ভাষণ দেন, সেদিন সকাল থেকে সচিবালয় ঘেরাও করেন আনসার সদস্যরা। সেই রাতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের (যমুনা) আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য নিয়ে। তারা কতগুলো জায়গায় পরিবর্তন ও সংস্কার করবে, এরপর নির্বাচন দেবে। সুতরাং এই সরকারের কাছে সব বিষয়ে দাবি জানানো এবং দাবি পূরণের আশা করাটা সঠিক নয়। বর্তমান সময়ে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি সমর্থনযোগ্য নয় বলে মনে করেন তিনি।