ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে। এই আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, ক্যাম্পাসে দখলদারত্বের ছাত্ররাজনীতির অবসানসহ বিভিন্ন বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের পরবর্তী লক্ষ্য কী?
আবু বাকের মজুমদার: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর জনগণের মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। সেটি হলো অপশাসনে দুর্বল হয়ে পড়া রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সহযোগিতা চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেই সহযোগিতা করে যাবে। জনগণের মধ্যে আমরা এখন নানা ধরনের আশা-আকাঙ্ক্ষা দেখতে পাচ্ছি। বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবি আসছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা যেহেতু এখন অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন, তাই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য তাঁদের সহযোগিতা করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় অপকর্মের খবর শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনাদের বার্তা কী?
আবু বাকের মজুমদার: ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে কোথাও কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ব্যানার ব্যবহার করে কমিটি দেওয়া হচ্ছে। সেই কমিটিগুলোকে আমরা ইতিমধ্যেই ডিজওন (অনুমোদন না দেওয়া) করেছি। একটা বড় আন্দোলন বা ঘটনা ঘটলে সুযোগসন্ধানীরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে এবং রাষ্ট্রের কোনো ক্ষয়ক্ষতির পক্ষে ছিল না। এখন যাঁরা অপকর্ম করছেন, তাঁদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ বলে আমরা মনে করি না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষের কোনো মানুষ হলে তিনি অবশ্যই রাষ্ট্র ও জনগণের পক্ষে কাজ করবেন।
অপরাধে সম্পৃক্ততার কারণে কাউকে হল (বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে) থেকে বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হলে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হল প্রশাসনের মাধ্যমে সেটি করুন। হল প্রশাসন প্রমাণ সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষার্থীরা কোথাও আইন হাতে তুলে নেবেন না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আপনারা যাঁরা নেতৃত্বে আছেন, তাঁদের নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা আছে কি?
আবু বাকের মজুমদার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। সর্বশেষ আন্দোলনে আমরা যেটা করার চেষ্টা করেছি তা হলো, জনগণের চাওয়াকে সামনে নিয়ে আসা। আগামী দিনেও যদি আমাদের প্রতি জনগণের এমন কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে, সেটি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করব।
ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আপনাদের ভাবনাটা কী?
আবু বাকের মজুমদার: ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। তবে একটা কথা আমরা বারবার বলছি, ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে যে ধরনের দখলদারত্বের রাজনীতি ছিল, সে ধরনের রাজনীতি আমরা আর কখনোই গ্রহণ করব না।
আমাদের জায়গা থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। এর ভিত্তিতে আমরা কিছু প্রস্তাব তৈরি করেছি। প্রথমত, হলগুলোতে আসন বণ্টনের এখতিয়ার থাকবে শুধু প্রশাসনের। দ্বিতীয়ত, ছাত্রলীগ বিভিন্ন জোন (অঞ্চল) ভাগ করে অপরাজনীতি করত। হলের কক্ষগুলো ছাত্রলীগের অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পক্ষ দখল বা ভাগাভাগি করে নিত। এই আঞ্চলিক প্রভাবটা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, প্রশাসন যখন আসন বণ্টন করবে, তখন যাতে এগুলো রিশাফলিং (পুনর্বিন্যাস) করে দেয়। এটি করা গেলে অঞ্চল ও কক্ষভিত্তিক রাজনীতি অনেকাংশে কমে আসবে। তৃতীয়ত, হলগুলোতে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী অগ্রাধিকারভিত্তিতে হলে আসন দিতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাব হচ্ছে, ছাত্রত্ব না থাকা সত্ত্বেও হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ত্যাগের নির্দেশ দিতে হবে, এই কাজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করতে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আবু বাকের মজুমদার: আপনাকেও ধন্যবাদ।