বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে শুধু গ্রীষ্মকাল নয়, বছরের একটা বড় সময়জুড়ে প্রকৃতিতে থাকে দাবদাহ। তীব্র গরমে জনজীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ। একটু শীতলতা ও স্বস্তির খোঁজে থাকে সবাই। তাই বিশ্বব্যাপী মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে এয়ার কন্ডিশনার বা এসির ওপর। ঘরে-কর্মক্ষেত্রে এসিতে মিলছে স্বস্তি ও আরাম। বাসা, অফিস-আদালত, শিল্পকারখানায়ও দিন দিন বাড়ছে এই শীতলীকরণ যন্ত্রের ব্যবহার।
অফিস কিংবা বড় বড় বাণিজ্যিক ভবনে স্থাপনের জন্য এসি কেমন হয়? জানতে চাইলে সিঙ্গার বাংলাদেশের প্রোডাক্ট ম্যানেজার সানজানা মাহমুদ বলেন, ‘ঘরবাড়ির এসি ও অফিস-আদালতের এসির মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। বাড়ির এসি শুরু হয় এক টন থেকে। কিন্তু অফিসে খোলা পরিবেশে বড় পরিসরে বড় এসির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তখন এসি ব্যবহার করা হয় পাঁচ টন। এ ছাড়া এসব স্থানে বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায় ক্যাসেট বা সিলিং এসি।’
অফিস-কারখানায় এসি চালাতে হলে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এসি মোনোব্লক হোক কিংবা স্প্লিট সিস্টেম—এগুলোর কোনোটিতে থাকে ইনভার্টার প্রযুক্তি, কোনোটিতে তা অনুপস্থিত থাকে। ইনভার্টারসহ এসিগুলো কমপ্রেসরের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এ জন্য রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ফ্লোরেটও থাকে নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ এগুলো কম বিদ্যুৎশক্তি খরচ করে। তাই অফিস বা কারখানার যাঁরা এনার্জি এফিশিয়েন্ট এয়ার কন্ডিশনার খুঁজছেন, তাঁদের জন্য ইনভার্টার প্রযুক্তিসহ এসি কেনাই যুক্তিযুক্ত হবে।
বাণিজ্যিক জায়গার জন্য সিলিং ক্যাসেট বা সিলিং সাসপেন্ডেড এয়ার কন্ডিশনার উপযুক্ত। বাড়িতেও যদি অনেক বড় স্পেসে এসি ব্যবহার করতে হয়, তবে সিলিং সাসপেন্ডেড এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করাই ভালো। সিলিংয়ে লাগানো বা ঝুলে থাকা—এ ধরনের এসি সাধারণত ভবনের ভেতর দিয়ে আসা এয়ার পাইপে সংযুক্ত থাকে। এই এসিগুলো দেখতে সুন্দর হয় আবার কার্যক্ষমতার দিকে থেকেও সিলিংয়ে লাগানো এসিগুলো উপকারী। সিলিংয়ে লাগানো এসি দেখতে আধুনিক আর জানালা বা মেঝে ভেদ করে ইনস্টল করার প্রয়োজন হয় না। এর চারটি আউটলেট শুধু বাইরে থেকে দেখা যায়। সিলিং সাসপেন্ডেড এয়ার কন্ডিশনারগুলো উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন, তাই তিন-চারটি ওয়াল মাউন্টেড ইউনিটের সমান কাজ করে।
চার ও পাঁচ টনের ক্যাসেট ও সিলিংটাইপ এসির নান্দনিক ডিজাইন ও শীতল হওয়ার বিষয়টি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে। নতুন মডেলের পাশাপাশি দেশেই তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভিআরএফ বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসি। ভিআরএফ প্রযুক্তিকে বলা হয় চতুর্থ প্রজন্মের সবচেয়ে আধুনিক শীতাতপনিয়ন্ত্রণ বা এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবস্থা। এই প্রযুক্তি একই সময়ে পুরো ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। একটি ভবনের ইনডোর এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিটগুলো সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। ভিআরএফ এয়ার কন্ডিশনারগুলোয় রয়েছে কমফোর্ট কুলিং ও ডুয়াল সেন্সিং সিস্টেম। ফলে অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন অনুযায়ী ঠান্ডা ও গরম বাতাস পাওয়া যায়। এটি অফিস কিংবা বাণিজ্যিক ভবনের যেকোনো স্থানে সুবিধামতো স্থাপন করা যায়।
শিল্পকারখানা, অফিস-আদালত ও প্রার্থনালয়ে এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, এসব জায়গায় যেহেতু ধুলার পরিমাণ বেশি থাকে, তাই সচেতনতাও দরকার বেশি। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফিল্টার অপারেটিং চেক করতে হবে। অতিরিক্ত শীতল করে রাখা যাবে না। এসিগুলোর আউটডোর এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস পায়। আবদ্ধ জায়গায় রাখলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তাই এই ধরনের এসি ব্যবহারে হতে হবে সতর্ক ও সচেতন।