কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা মনে করবেন না এটা তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আপনারা যেমন–তেমন করে যেখান থেকে লোক এনে বসিয়ে দেবেন, তা হবে না। যাঁরা বিজ্ঞ মানুষ, তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তে আমরা সন্তুষ্ট, কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না।’
আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলন’ ব্যানারে আয়োজিত এক ‘গণপ্রতিরোধ’ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। গণমাধ্যমের সংস্কার, নিয়োগ কমিশন গঠন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা ও মব জাস্টিসের প্রতিবাদে এ আয়োজন করা হয়।
গণমাধ্যমের সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, গণমাধ্যম বা সম্প্রচার নীতি যে নামেই হোক, তা দরকার। এই নীতি ছাড়া গণমাধ্যমকর্মীরা মালিক থেকে আলাদাভাবে স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে পারবেন না। সরকারের প্রথম কাজ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে গণমাধ্যম নীতি প্রণয়ন করা। গণমাধ্যমকর্মীরা যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকে দীর্ঘদিন বেতন পান না। অনেকে সম্মান ও স্বীকৃতিটুকু পান না। যিনি দায়িত্বে আছেন, তাঁকে এসব শুনতে হবে।
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘যেসব সিদ্ধান্ত এক পক্ষীয়ভাবে নিয়েছেন, এটার নিন্দা করি। যখন গণ–অভ্যুত্থান ঘটে, তখন জনগণই তাঁদের ক্ষমতায় এনেছে। ক্ষমতায় গিয়ে যদি জনগণকে বাদ দিয়ে কারও কথা শুনলেন না—ড. ইউনূস শুনলেন না, আসিফ নজরুলও শুনলেন না, তাহলে মারাত্মক ক্ষতি করছেন গণমানুষের কথা না শুনে। এই সময়ে বিভিন্ন বিপর্যয়ের জন্য আপনারা এককভাবে দায়ী।’
গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়োগে কারও সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি অভিযোগ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘হাসিনার চেয়েও অনেক বেশি একনায়কতান্ত্রিক। এটা তো আশা করিনি।’
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, কথায় কথায় তরুণ শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করা যাবে না। তারুণ্যের নেতৃত্বে এই অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। সবকিছু তরুণেরা করে দেবেন, এই আশা করা যাবে না। হলে নিয়ে এসে পিটিয়ে মারার ঘটনায় তরুণদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে।
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, আন্দোলনে তরুণদের যে ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি থাকা দরকার, তা দুর্ভাগ্যক্রমে ছিল না। এতে তাঁরা অতি সহজে বলতে পারেন, তাঁরা মার্ক্স (কার্ল মার্ক্স) পড়তে চান না। যদি কোনো তরুণ নেতা এটা বলে থাকেন, তিনি মারাত্মক ক্ষতি করেছেন। বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে হলে সারা দুনিয়ায় অর্থশাস্ত্রবিদদের মধ্যে কার্ল মার্ক্স প্রধান পুরুষ। তরুণেরা এই ধরনের ভুল চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হলে তাঁদের বোঝাতে হবে। তিনি আরও বলেন, লালনকে কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, তিনি ইসলামবিরোধী কেউ নন। তিনি একজন দার্শনিক।
মাজার ভাঙার বিপক্ষে উসকানিমূলক বক্তব্য ছাপানোর অভিযোগ তুলে সেই পত্রিকার লাইসেন্স বাতিল অথবা নিজেদের পত্রিকায় ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান ফরহাদ মজহার।
অভ্যুত্থান–পরবর্তী পর্যায়ে গণমাধ্যমকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, লড়াইয়ে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল না। এ অভ্যুত্থান সফল হয়েছে। কারণ, কোনো দলের পক্ষে তরুণেরা আন্দোলনে নেতৃত্বে দেননি। কোনো দলকে প্রতিনিধিত্ব করেননি। এখানে সব দল ও মতের ভূমিকা আছে। যারা ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ফিরিয়ে আনতে চায়, তারা ছাত্রদের শিবির ট্যাগ দিচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল মোমেনীন মানিকের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসাদ বিন রনি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের খুরশিদ আলম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, সাংবাদিক শাহীন রেজা প্রমুখ।