উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য তরুণেরাই পূরণ করতে পারবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন
ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণ প্রজন্মকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সরকারপ্রধান বলেছেন, তিনি চান, তরুণেরা প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে উচ্চমানের শিক্ষায় প্রস্তুত হোক।

প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত দ্বিতীয়বারের মতো ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি জাতির জন্য যুবসমাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি চাই, যুবকেরা প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চমানের হোক। যুবসমাজ আমাদের জন্য একটি বড় শক্তি। তারাই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। তরুণেরাই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে। কারণ, তারাই ২০৪১ সালের মূল স্থপতি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশ এগিয়ে যাবে শত বাধা অতিক্রম করে। পৃথিবীর অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধদের দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা সেটা হতে চাই না। কাজেই আমাদের এই যুবসমাজই পারবে, সারা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে।’

যুবসমাজ সেবক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে—এমন আশা পোষণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের যুবসমাজ মানুষের সেবক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে, নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নতি করবে, পরিবারকে সহায়তা করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজকে সুশিক্ষিত করতে ক্ষমতায় এসেই কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ। করোনার মধ্যে যুবসমাজই সবার আগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, যা পুরো জাতির জন্য উৎসাহের কারণ।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক যুবসমাজের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যুবসমাজের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সরকার তরুণদের উন্নয়নে যথাযথ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুলসংখ্যক যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁর সরকার বেসরকারি খাতে ব্যাংক, বিমা, টেলিভিশন, রেডিওসহ সবকিছু দিয়েছে। তাঁর সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে যেন যুবকেরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে যেতে পারে। যুবকদের কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, তারা যেন উদ্যোক্তা হতে পারে, অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে অপরকে চাকরি দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ডেটা সেন্টার ও কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। যেখানে বিপুলসংখ্যক যুবসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি কর্মসংস্থানের সুযোগকে অবারিত করেছে।

যুবকেরাই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর যুবসমাজের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। ’৭৫-এর পর সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি যুবসমাজের হাতে অস্ত্র, মাদক তুলে দিয়ে তাদের বিপথে পরিচালিত করেছিলেন। তিনি যুবসমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ থেকে যুবকদের জন্য কিছু অংশ পাঠ করেন শেখ হাসিনা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান, তৃণমূলে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অবদানের জন্য ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ পাওয়া যুবকদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে যুবসমাজ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমি আশা করি, আগামী প্রজন্ম তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হবে। জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করে তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর জোর দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বিজয়ীদের হাতে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ তুলে দেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন স্বাগত বক্তৃতা করেন।

পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের ক্রেস্ট, সনদ এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে মো. মাসুদ আলম ও মেঘনা খাতুন অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন।