কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পযটকের সমাগম নেই, তাই বেকার হয়ে পড়েছেন ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীরাও। গতকাল দুপুরে তোলা
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পযটকের সমাগম নেই, তাই বেকার হয়ে পড়েছেন ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীরাও। গতকাল দুপুরে তোলা

বেকার হয়ে পড়েছেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ৬০০ আলোকচিত্রী

গলায় পরিচয়পত্র, হাতে ক্যামেরা নিয়ে সমুদ্রসৈকতে ঘুরছিলেন তরুণ মো. সৈকত। উত্তাল সমুদ্রে দল বেঁধে কাউকে গোসল করতে দেখলেই ছুটছিলেন তিনি। তবে বারবারই তাঁকে ফিরতে হচ্ছিল হতাশ হয়ে।

গতকাল রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্টে দেখা যায় এই চিত্র। আলাপে সৈকত জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের টাকার বিনিময়ে ছবি তুলে দেন তিনি। এই আয়েই চলে তাঁর সংসার। তবে এক মাস ধরে কক্সবাজারে পর্যটক নেই বললেই চলে। এতে আয় একেবারেই কমে গেছে তাঁর।

সৈকত বলেন, এখন যাঁরা সৈকতে আসছেন, তাঁদের প্রায় সবাই স্থানীয় বাসিন্দা। পর্যটক থাকলে আয় ভালো হয়। প্রতিটি ছবি তোলার বিনিময়ে পাঁচ টাকা করে পান, প্রিন্ট করে দিলে দেন ২০ টাকা করে। দেড় মাস আগেও তাঁর দৈনিক আয় ছিল প্রায় ৩ হাজার টাকা। এখন কোনো কোনো দিন ১০০ টাকাও আয় হচ্ছে না।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটক কমায় সৈকতের মতো আয় কমেছে আরও ছয় শতাধিক আলোকচিত্রীর। গতকাল সরেজমিনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী পয়েন্টসহ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। কিছু নারী-পুরুষকে সৈকতে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের বেশির ভাগই আশপাশের এলাকার বাসিন্দা।

মোহাম্মদ সাগর নামের এক আলোকচিত্রী বলেন, গত শনিবার সারা দিনে তিনি মাত্র ১২০ টাকা আয় করেছেন। তিনি বলেন, সমুদ্র বেশ কিছুদিন ধরে উত্তাল, দেশের পরিস্থিতিও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তাই সৈকতে পর্যটক সমাগম কম।

আলোকচিত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমুদ্রসৈকতে ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীর সংখ্যা ৬৩৫ জন। ২৫৭ জন স্টুডিও মালিকের তত্ত্বাবধানে তাঁরা ছবি তোলেন। পর্যটক না থাকায় এখন ৯০ শতাংশ আলোকচিত্রীর বেকার সময় কাটছে।

কক্সবাজার লাবনী বিচ স্টুডিও মালিক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক কাঞ্চন আইস বলেন, পর্যটক না থাকায় আলোকচিত্রীরা আয়–রোজগার করতে পারছেন না। লোকসান গুনতে গুনতে স্টুডিও মালিকেরাও হয়রান। এ অবস্থায় আলোকচিত্রীদের অনেকেই পেশা বদল করছেন। কেউ চা বিক্রি করে, কেউ রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল থাকা, ভারী বৃষ্টির কারণে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব—সব মিলিয়ে পর্যটকেরা সৈকত ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। হোটেলগুলো ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার পরও পর্যটক পাচ্ছেন না।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ জুলাই থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫২ দিনে কক্সবাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, শুঁটকি, মৎস্যসহ পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ১৪টি খাতের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। ৫০ হাজার ব্যবসায়ীসহ অন্তত ৩ লাখ মানুষ এসব খাতের সঙ্গে জড়িত।