সেন্ট মার্টিনে বিধ্বস্ত হয়েছে বসতঘর। ঝড়বৃষ্টিতে নতুন করে ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় মোখায় আম্বিয়া খাতুনের ঘরের চাল উড়ে যায়। ত্রিপল ও পলিথিন দিয়ে রাতে কোনোমতে ঘুমানোর চেষ্টা করেন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের জালিয়াপাড়ার এই গৃহবধূ। কিন্তু বুধবার রাত ও গতকাল বৃহস্পতিবারের ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে নতুন করে বিপদে পড়েছেন তিনি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে পলিথিন ও ত্রিপল জড়িয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।
আম্বিয়া বলছিলেন, ‘সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। কবে ঘরে চাল দিতে পারব, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’
গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, ক্যাম্পপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ডাঙ্গরপাড়া ও উত্তরপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বিধ্বস্ত বসতঘরগুলোতে পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
জালিয়াপাড়ার জেলে শফিক আহমদ নতুন করে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়াকে বর্ণনা করলেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে। বললেন, ‘চার দিন আগে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে সব নষ্ট হয়ে গেছে, মাছ ধরাও বন্ধ আছে, হাতে টাকাপয়সাও নাই। তাই ঘর ঠিক করতে পারছি না। সরকারি কোনো ত্রাণও পাইনি।’
ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া, এরপর বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার পর পুরো জালিয়াপাড়াটি চার দিন ধরে রয়েছে বিদ্যুৎবিহীন। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানালেন এ তথ্য।
জালিয়াপাড়া থেকে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই দক্ষিণপাড়া গ্রাম। ওই গ্রামে ঢুকতেই নজরে পড়ে ঘরের চালাবিহীন হোসেন আহম্মদের বাড়ি। চালার ওপরে ত্রিপল বিছানোর চেষ্টা করছেন দুজন শ্রমিক। তাঁরা বললেন, গত রাতে দমকা হাওয়ায় টাঙানো ত্রিপলটি ছিঁড়ে পড়েছিল। ঘরে থাকা লোকজন বৃষ্টিতে ভিজেছেন। পরে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।
একই এলাকার হাবিবুর রহমান জানালেন, ঘূর্ণিঝড়ে যেসব বসতঘর বাঁশ, গোলপাতা, টিন দিয়ে বানানো, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
মোখার আঘাতে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে ১ হাজার ২০০টির বেশি। দ্বীপের মাঝেরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়ার অধিকাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। এ কারণে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আবুল কাশেম মুঠোফোনে বলেন, মোখার আঘাত কাটিয়ে না উঠতেই বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা খাদ্যসামগ্রী চাই না, পুনর্বাসনের জন্য টিন ও বাঁশ চাই।’
একই অবস্থা সেন্ট মার্টিন পূরপাড়ার নুর আহমদের। নূর আহমদ বললেন, ‘হাটবাজারে মাছ, তরিতরকারির সংকট। হাতে টাকাও নেই। ছেলেমেয়েরা কী খেয়ে বাঁচবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছপালা সরিয়ে সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হযেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যের নেতৃত্বে গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল সেন্ট মার্টিনে ২০০ পরিবারকে দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ছয় হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। শাহপরীর দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা চূড়ান্ত হলে তাঁদেরও ঢেউটিন ও নগদ টাকা দেওয়া হবে।