রাশেদা কে চৌধূরী
রাশেদা কে চৌধূরী

যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্প্রতি নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়ানক চিত্র দেখতে পাচ্ছি। এটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। শিক্ষাঙ্গনে এ ধরনের জঘন্য ঘটনা আমাদের ক্ষুব্ধ করে। মানুষ গড়ার শেষ ধাপটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হাতে থাকে; সেখানেও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা ব্যথিত হই।

এসব ঘটনাকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এমন ঘটনা সর্বত্র হয়ে থাকে, বহির্বিশ্বেও ঘটে থাকে-এসব বলে বিষয়টাকে হালকাভাবে দেখারও অবকাশ নেই। বহির্বিশ্বে এমন ঘটনা ঘটলেও সেখানে বিচার হয় এবং পুনরাবৃত্তি কম হয়। আমাদের এখানে বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি ঘাড়ে চেপে বসে আছে।

আমাদের সন্তানেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুরক্ষিত থাকবে-এটি আশা করি। সেই চিন্তা করেই সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে যখন যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে, তখন শিক্ষাঙ্গনের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রা নিয়ে গর্ব করার বিষয় আছে। সেখানে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে, তখন এটি কেবল জনগণের সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয় তা নয়, দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়। উন্নত দেশে ভুক্তভোগীরা বিচারের জন্য যান। কিন্তু আমাদের এখানে অনেকেই ভয়ে মুখ খোলেন না এবং বিচারের জন্য যান না।

এ অবস্থায় করণীয় হিসেবে বলব, ঘটনা ঘটলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এই শাস্তি যেন নমনীয় না হয়। এখন দেখা যায় সাময়িক বরখাস্ত, বরখাস্ত বা বহিষ্কারের মতো শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু এটি ফৌজদারি অপরাধ। তাই অন্য অপরাধীদের যেমন বিচার হয়, তেমনি এই অপরাধেরও শাস্তি হতে হবে।

এ জন্য সঠিক তদন্ত করে অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রতা করা যাবে না। দীর্ঘসূত্রতার জন্যই ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। তাই এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি বলব, এখন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপুলসংখ্যক নারী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। কিন্তু তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা নেই। কমনরুম এবং ওয়াশসুবিধাও পর্যাপ্ত নয়। এগুলো না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা অসুবিধায় পড়েন। তাই নারীবান্ধব ক্যাম্পাসের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

  • রাশেদা কে চৌধূরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা