মিরসরাইয়ে গণপিটুনিতে নিহত বিএনপি নেতা মো. রফিক
মিরসরাইয়ে গণপিটুনিতে নিহত বিএনপি নেতা মো. রফিক

মিরসরাইয়ে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গণপিটুনিতে মো. রফিক নামের এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। রফিক উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের কাজীর তালুক এলাকার মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে। সাবেক ইউপি সদস্য মো. রফিক সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ঘটনায় আরও সাতজন আহত হন। স্থানীয় লোকজন বিএনপি নেতা ও তাঁর সহযোগীদের বহন করা তিনটি অটোরিকশা জ্বালিয়ে দেন।

গতকাল শনিবার মধ্যরাতে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এস কিউ নামের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির নির্মাণাধীন একটি কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাত সন্দেহে স্থানীয় লোকজন বিএনপি নেতা ও তাঁর সহযোগীদের আটক করে গণপিটুনি দেন বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, ডাকাতির নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে রফিককে হত্যা করা হয়েছে।

এস কিউ কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এহসানুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত তিন মাসে তিন দফায় আমাদের কারখানায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তিন মাস আগে একবার কারখানায় ঢুকে নিরাপত্তাকর্মীদের বেঁধে ৮০ লাখ টাকার কেব্‌ল নিয়ে যায় ডাকাত দল। এর মধ্যে গত ২৯ আগস্ট রাতে আমাদের সাত নিরাপত্তাকর্মীকে বেঁধে বেধড়ক মারধর করলেও সেবার কিছু নিতে পারেনি। গতকাল দিবাগত রাত দেড়টায় দূরের একটি মৎস্য প্রকল্পে হানা দিয়ে ফেরার পথে দেশি অস্ত্র নিয়ে ১৪ থেকে ১৫ জনের একটি ডাকাত দল আমাদের কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীরা অ্যালার্ম বাজান। এতে আশপাশের কারখানার লোকজন ও রাতে খালে মাছ ধরতে আসা মানুষ তাদের ধাওয়া দেন। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পালানোর সময় মানুষ তাদের ধরে গণপিটুনি দেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জ্বালিয়ে দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে জনতার হাত থেকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে আমাদের কারখানার ভেতর এনে রাখি। আমরা আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সকালে স্বজনেরা কারখানায় এসে তাদের নিয়ে যান। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেন।’

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সিফাত সুলতানা বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টায় মো. রফিক নামের এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। এখানে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

গণপিটুনিতে বিএনপি নেতার মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। আজ দুপুরে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এস কিউ কারখানার সমানে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের শিল্প পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শওকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন এস কিউ কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ দুর্বল। আগেও একবার এ কারখানায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাতেও দেশি অস্ত্র নিয়ে কিছু লোক কারখানায় প্রবেশের চেষ্টা করে বলে জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে কারখানার নিরাপত্তাকর্মী ও আশপাশের লোকজন মিলে ধাওয়া করে তাঁদের মারধর করে আটকে রাখেন। পরে গণপিটুনিতে আহত ব্যক্তিদের একজন মো. রফিক হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। ঘটনার সময় রফিক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা দেশি অস্ত্র ও পুড়িয়ে ফেলা তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা হেফাজতে নিয়েছি আমরা। জোরারগঞ্জ থানা–পুলিশসহ এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেব আমরা।’

এ ঘটনার পর আজ রোববার দুপুরে কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন মিরসরাই সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আল মামুন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর আমিন।

জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এস কিউ কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছি আমরা।’

গণপিটুনির শিকার লোকজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা দেশীয় অস্ত্র। আজ দুপুরে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এস কিউ কারখানার সমানে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত রফিক সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। ১৫ বছর আগে তাঁকে নিয়ে নানা দুর্নাম থাকলেও এখন তিনি ভালো মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বিএনপির যেকোনো আন্দোলন–সংগ্রামে অগ্রভাগের মানুষ ছিলেন তিনি। গতকাল রাতে সাহেরখালী এলাকায় মাছের প্রকল্প নিয়ে তাঁর সঙ্গে কিছু লোকের ঝামেলা হয়েছিল। সেখান থেকে রাতে ফেরার পথে এস কিউ কারখানা এলাকায় তাঁদের ধরে ডাকাতির কথা ছড়িয়ে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। আমি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।’