চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড’ নামের প্ল্যান্টে গাড়িচালকের সহকারীর কাজ করতেন মোহাম্মদ ফরিদ (৩৬)। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্ল্যান্টে বিস্ফোরনে প্রাণ হারান তিনি। পরে ফোন পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ফরিদের মরদেহ খুঁজে পান তাঁর স্ত্রী।
নিহত ফরিদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকায়। আজ দুপুর ১২টার দিকে শ্যালক আজম খানকে ফোন করেছিলেন তিনি। আজম খান প্রথম আলোকে বলেন, এক ব্যক্তি বিকেলে ফরিদের স্ত্রী রাশেদা আক্তারকে ফোন করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। সন্ধ্যায় তাঁরা সেখানে যান। প্রথমে ফরিদকে খুঁজে পাননি। পরে পুলিশের মাধ্যমে মর্গে তাঁর মরদেহ পান।
ফরিদের মরদেহ পাওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন স্ত্রী রাশেদা। তখন থেকেই বিলাপ করছেন। রাশেদা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সংসারে তিন মেয়ে। সবাই ছোট। ফরিদের একার আয়েই চলত সংসার। হেলপারের কাজ করে মাসে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা পেতেন তিনি। এখন মেয়েদের কে দেখবে, সংসার কে চালাবে, তা কারও জানা নেই।
এদিকে বিস্ফোরণে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে আশপাশের তিন কিলোমিটার দূর থেকেও। বিস্ফোরণের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে দুর্ঘটনাস্থল থেকে উড়ে যাওয়া একটি লোহার টুকরার আঘাতে আধা কিলোমিটার দূরে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম মো. শামসুল আলম। ওই সময় তিনি একটি দোকানে বসেছিলেন।
শামসুল আলমের জামাতা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জাহানাবাদ এলাকায় একটা লাকড়ির দোকানে বসেছিলেন তাঁর শ্বশুর। হঠাৎ লোহার কিছু একটা উড়ে এসে তাঁর মাথায় লাগে বলে শুনেছেন। ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।
বিস্ফোরণের ঘটনায় এ দুজনসহ মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য বিকেলেই নিশ্চিত করেছিলেন সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদৎ হোসেন। পরে রাতে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ জানান, এই বিস্ফোরণে নিহত পাঁচজনের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আরেকজনের লাশ ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বিএসবিএ হাসপাতালে রয়েছে।
সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের অবস্থান উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায়। এই অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে গত বছরের ৪ জুন রাতে বিস্ফোরণ হয়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত ও ২ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন।