‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের পথ’ শীর্ষক সংলাপে অংশগ্রহণকারী জনস্বাস্থ্যবিদ, গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কয়েকজন। আজ শনিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে
‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের পথ’ শীর্ষক সংলাপে অংশগ্রহণকারী জনস্বাস্থ্যবিদ, গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কয়েকজন। আজ শনিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে

জাতীয় সংলাপ

স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি

দুর্বল স্বাস্থ্য খাত সবল হবে এমন একটি জাতীয় আকাঙ্ক্ষা দেশে তৈরি হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাস কেটে গেলেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি স্বাস্থ্য খাতে। এদিকে স্বাস্থ্য কমিশনকে পাশ কাটিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন পাস করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

আজ শনিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের পথ’ শীর্ষক সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা এসব কথা বলেন। ব্র্যাক ও নাগরিক সংগঠন ইউএইচসি ফোরাম এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের ৩ জন সদস্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২ জন সচিবসহ প্রায় ৫০ জন জনস্বাস্থ্যবিদ, গবেষক ও বিজ্ঞানী উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপে মুক্ত আলোচনা পর্বে জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাস চলে গেছে, কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং কিছু ক্ষেত্রে কাজ আটকে গেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের অনেক স্থানে টিকার সংকট দেখা দিয়েছে।

একই পর্বে সরকার গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানূর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় স্বাস্থ্য বিমা, লাইসেন্সিং, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র—এ রকম নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই আইন পাস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ স্বাস্থ্য কমিশনের কাজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের কাজ শেষ হওয়ার আগে বা সংস্কার কমিশনকে পাস কাটিয়ে আইন পাস করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি আরও বলেন, আইনটি পাস করা হলে তা হবে সংস্কার কমিশনকে চপেটাঘাত করা।

কী করা যেতে পারে

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে প্যানেল আলোচনায় সংস্কার কমিশনের সদস্য চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার যা হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, যেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরে আসা রাজনৈতিক সরকার সেই অনুযায়ী কাজ করে। আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কমিশন চেষ্টা চালাবে বলে তিনি জানান। রোগকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার মতো সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে কমিশনের অপর সদস্য নায়লা জামান খান বলেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে হতে হবে মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জরুরি সেবার জন্য দেশের সব অ্যাম্বুলেন্সকে উবারের মতো একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব। ব্র্যাকের স্বাস্থ্য ও মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনার জ্যেষ্ঠ পরিচালক মো. একরামুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি কোনো উদ্যোগ বা কাজের কথা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মন দিয়ে শুনতে চান না। আইন বা বিধিবিধানের অজুহাত দেন।

মুক্ত আলোচনা পর্বে ১০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারী স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে নানা ধরনের পরামর্শ বা সুপারিশ করেন। নারীপক্ষের প্রতিনিধি তাসনিম আজিম বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যাই নারীর একমাত্র স্বাস্থ্য সমস্যা নয়। নারীর আরও অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী শামস এল আরেফিন বলেন, স্বাস্থ্য সংস্কারকে বৃহত্তর পরিসরে ভাবতে হবে। ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উদ্ভাবনকে উপেক্ষা না করে স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। এ রকম আরও নানা ধরনের প্রস্তাব বা সুপারিশ করেন অনেকে।

বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) বা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) পরিবর্তন আনা হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারি বলেন, বড় ধরনের সংস্কারের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, এখন বড় কিছু চিন্তা করতে হবে। সংস্কারে ‘এক স্বাস্থ্য’ দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগাতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের দুই সচিব দুই ভাইয়ের মতো একসঙ্গে কাজ করছেন মন্তব্য করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, দেশে অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আছেন, তাঁদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি জানান, দেশের কোনো হাসপাতালে দাঁতের জরুরি চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বক্তব্য দেন সঞ্চালক, ইউএসসি ফোরামের আহ্বায়ক ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের অপচয় বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। নির্মাণকাজে ব্যয় একধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের উন্নতিই হতে পারে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের মূল জায়গা।