শেষ পর্যন্ত বক্তৃতা দিতে পারেননি হো চি মিন ইসলাম

উইমেন ক্যারিয়ার কার্নিভ্যালের বক্তা হিসেবে হো চি মিন ইসলামের ছবি দিয়ে প্রচারও চালিয়েছিল আয়োজক সংস্থা
ছবি: সংগৃহীত

একটি গোষ্ঠীর আন্দোলনের ফলে শেষ পর্যন্ত হো চি মিন ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দিতে পারেননি। বেসরকারি সংগঠন হিরোজ ফর অল ও আইসোশ্যাল আয়োজিত ‘উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল-এক্সপ্লোর ইয়োর ফিউচার উইথ আস’ এর একটি সেশনে গতকাল শুক্রবার হো চি মিন ইসলাম বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। তিনি লিঙ্গ রূপান্তরিত নারী (ট্রান্সজেন্ডার)।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই কার্নিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়। হো চি মিন ইসলামের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে আয়োজক সংস্থাও শেষ পর্যন্ত হো চি মিন ইসলামকে অনুষ্ঠানে যেতে নিষেধ করে।

আজ শনিবার কথা হয় হো চি মিন ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সমাজে পিছিয়ে পড়া কমিউনিটির প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আয়োজক সংস্থা তাঁর ছবি দিয়ে পোস্টারও ছাপিয়েছিল। তবে তারপর একটি গোষ্ঠী (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ) অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি আটকাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল দিয়ে ও বিভিন্নভাবে আন্দোলনের হুমকি দিতে থাকে।

হো চি মিন ইসলাম বলেন, ‘আমার অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা শুনে আন্দোলনকারীরা পরীক্ষা বর্জনসহ নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। অথচ আমি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সমতার ভিত্তিতে কীভাবে চাকরি পেতে পারে, কেমন পরিবেশ হলে কাজে টিকে থাকতে পারবে—এসব নিয়েই কথা বলতে চেয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হয়নি। তবে আয়োজক সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, আমি অনুষ্ঠানে গেলে আমার নিরাপত্তার হুমকি হতে পারে বলে অপারগতার কথা জানান। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমি কীভাবে কথা বলব? তাই শেষ পর্যন্ত আর সেখানে যাওয়া হয়নি।’

হো চি মিন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমি উগ্র গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়েছি। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল। আমার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আয়োজক সংস্থাও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেল। জাতিসংঘের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কেউ পিছিয়ে থাকবে না বলা হচ্ছে। অথচ আমাকে বাদ দিয়েই অনুষ্ঠান হলো। আয়োজক সংস্থা প্রতিবাদ হিসেবে অনুষ্ঠান বর্জন করেনি বা অনুষ্ঠানস্থল পরিবর্তন করেনি।’

উইমেন ক্যারিয়ার কার্নিভ্যালের আজ ছিল শেষ দিন। বেসরকারি সংগঠন হিরোজ ফর অলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক রেহনুমা করিম অনুষ্ঠানের ফাঁকে মোবাইলে প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)–এর ৫ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা-জেন্ডার সমতা অর্জন এবং মেয়ে ও নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে সামনে রেখে এ কার্নিভ্যালের আয়োজন করা হয়। কার্নিভ্যালের একটি সেশনে হো চি মিন ইসলামকে বক্তা হিসেবে রাখা হয়েছিল। দুই দিনব্যাপী কার্নিভ্যালটি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

হো চি মিন ইসলামকে বক্তা হিসেবে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক রেহনুমা করিম বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে হো চি মিন ইসলাম যাতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন, সে নিয়ে অনেক হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।’

হো চি মিন ইসলামকে কেন বাদ দেওয়া বা অনুষ্ঠানে যেতে বাধা দেওয়া হলো, তা নিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের পরিচালক এবং মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম প্রোগ্রামের সহযোগী অধ্যাপক রিজওয়ান উল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছে এবং মনিটরিং করছে। এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা, তা জানা যাবে।’

নাম প্রকাশ না করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশের দাবি কোন যুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেনে নিল বা মেনে নিতে বাধ্য হলো তার ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন।