শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার শ্রম আদালত। তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আজ সোমবার আদালত এই রায় দেন। ড. ইউনূসের কারাদণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনসূকে কারাদণ্ড দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। যদিও ইউনূসের সমর্থকেরা দাবি করেন যে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে (৮৩) তাঁর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপছন্দের ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘গরিবের রক্তচোষা’ বলে অভিযোগ করেন। কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়েছে।
বিবিসি শিরোনাম করেছে, ‘মুহাম্মদ ইউনূস: বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ীর কারাদণ্ড’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি আদালত দেশটির শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনায় একজন সোচ্চার ব্যক্তি। তাঁর সমর্থকেরা বলেন, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণের পথিকৃত নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বিশ্বের সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর সমর্থকেরা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরোধী হিসেবে একটি রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস। এ কারণে দলটি তাঁকে পছন্দ করে না। তাই তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এ মামলা করা হয়েছিল।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবাধিকার সংগঠনগুলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারপ্রধান হতে চলেছেন শেখ হাসিনা।
ড. ইউনূসের কারাদণ্ডের রায় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি। এসব প্রতিবেদনেও বর্তমান সরকারের সঙ্গে ড. ইউনূসের বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে এই মামলা করার অভিযোগের বিষয়টি এসেছে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ড. ইউনূসের সম্পর্ক ভালো নয়। রাজনৈতিক কারণে এই সাজা হলো বলে অভিযোগ তোলেন তাঁর সমর্থকেরা। ড. ইউনূস ও একই দিন সাজা হওয়া তাঁর আরও তিন সহকর্মী তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রায় ঘোষণার সময় আদালত চত্বরে কয়েক ডজন মানুষ ছোট একটি বিক্ষোভ করেন বলেও উল্লেখ রয়েছে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে।
হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের শিরোনাম ‘শ্রম আইন লঙ্ঘন করা নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করেছে বাংলাদেশ, যদিও মামলাকে “সারবত্তাহীন” বলছেন তাঁর সমর্থকেরা’।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রম আইন লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির আরও শতাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। ইউনূস ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দুই পরিচালককে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর একই আদালতে জামিনের আবেদন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আপিলের শর্তে তাঁকে এক মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দেন আদালত।