সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল। গতকাল রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল। গতকাল রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধের ডাক

সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘরে হামলা বন্ধ, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে গতকাল রোববার দেশের চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বক্তারা বলেন, প্রতিবার সরকার পরিবর্তন হয় আর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ হামলা-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

বেলা সাড়ে তিনটা থেকে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা চত্বরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠন যোগ দেয়। বক্তব্য ছাপিয়ে সমাবেশে কেবল শোনা যাচ্ছিল নানা স্লোগান। ‘জেগেছে রে জেগেছে সনাতনী জেগেছে’, ‘আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘স্বাধীন দেশে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বিচার চাই বিচার চাই, হামলাকারীর বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল।

সমাবেশে বক্তব্য দেন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত, দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড়, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার চৌধুরী, নগরের সভাপতি নিতাই প্রসাদ ঘোষ, দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক চন্দন দাশ, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার সেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন প্রমুখ।

বরিশাল নগরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বরিশাল জেলা ও মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চা এ কর্মসূচি পালন করে। বেলা তিনটায় নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে এ আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ বরিশাল মহানগরের সভাপতি ভানু লাল দে। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, জেলা সভাপতি মানিক মুখার্জি, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় সদস্য সুরঞ্জিত দত্ত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা সভাপতি হিরণ কুমার দাস প্রমুখ।

খুলনায় সচেতন সনাতনী ছাত্র ও নাগরিক সমাজ সমাবেশ ডাকে। এতে মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা এবং লুটপাটের প্রতিবাদ জানানো হয়। মহানগর পূজা উদ্‌যাপন কমিটির গণসংযোগবিষয়ক সম্পাদক ও শিববাড়ী কালী মন্দিরের সহসভাপতি বিমল সাহা বলেন, ‘আমাদের ওপর আর যেন কোনো হামলা না হয়, তার নিশ্চয়তা এবং যেসব হামলা হয়েছে, তার বিচার চাই।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে প্রথমে মানববন্ধন ও পরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মানিক মজুমদার, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি তুষার কুমার দত্ত, কলেজছাত্র দীপ্র রাজ কুন্ডু, সাগর রায়, সৌম্য সাহা প্রমুখ।

গতকাল বিকেলে সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকায় আয়োজিত কর্মসূচিতে হাজারো মানুষ অংশ নেন। সম্মিলিত সনাতনী সমাজ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে বেলা তিনটায় নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় আয়োজকেরা দাবি করেন, সম্প্রতি সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ২০০ বাড়িঘর, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রতিটি ঘটনার বিচার চেয়ে কর্মসূচি পালন করছে।

বিকেলে রংপুর নগরের প্রেসক্লাব এলাকায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ রংপুর জেলা ও মহানগরের আয়োজনে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ রংপুর জেলার সভাপতি সুশান্ত ভৌমিকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিষদের রংপুর মহানগরের সভাপতি সুব্রত সরকার, পরিষদের রংপুর জেলার সিনিয়র সহসভাপতি ধীমান ভট্টাচার্য, পরিষদের রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক স্বপন রায় প্রমুখ।

সমাবেশে সুশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘কেন আমাদের বাড়ি, মন্দির পাহারা দিতে হবে? আমরা চাই, দ্রুত হামলাকারী দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা চাই, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]