শাস্তি দেওয়ার ছয় মাস না যেতেই ‘নবীন কর্মকর্তা’ বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ক্ষমা (অব্যাহতি) পেয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুন্নেছা আক্তার। ‘পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ’ ও ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি তাঁকে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে ১ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সদয় হয়ে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন—এমন তথ্য জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ফয়জুন্নেছা আক্তার সরকারি চাকরিতে যোগ দেন ২০১৪ সালে। সে হিসাবে তাঁর চাকরির বয়স ১০ বছর। ফলে তাঁকে ‘নবীন কর্মকর্তা’ বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথম দুই বছর কাজ করলে বা শিক্ষানবিশ হলে তাঁকে ‘নবীন কর্মকর্তা’ বলা যেতে পারে মত দেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১০ বছর কর্মরত থাকার পর কীভাবে নবীন হয়? এ ছাড়া অপরাধের সঙ্গে নবীন বা প্রবীণের কোনো সম্পর্ক নেই।
আলী ইমাম মজুমদার আরও বলেন, বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তি দেওয়ার পর ফয়জুন্নেছা আক্তারকে আবার অব্যাহতি দেওয়া হলে অপরাধকারীরা আরও প্রশ্রয় পাবেন এবং ভবিষ্যতে আরও প্ররোচিত হবেন। তদন্তে তো প্রমাণ হয়নি তিনি অপরাধ করেননি। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে অন্যরাও অপরাধ করতে দ্বিধা করবেন না।
বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তি দেওয়ার পর তাঁকে আবার অব্যাহতি দেওয়া হলে অপরাধকারীরা আরও প্রশ্রয় পাবে এবং ভবিষ্যতে আরও প্ররোচিত হবে। তদন্তে তো প্রমাণ হয়নি ফয়জুন্নেছা আক্তার অপরাধ করেননি। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে অন্যরাও অপরাধ করতে দ্বিধা করবে না।আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব
প্রজ্ঞাপনটিতে সই করেছেন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-২ শাখা থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফয়জুন্নেছা আক্তার মতিঝিল রাজস্ব সার্কেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মরত থাকার সময় ‘গোল্ডেন সন লিমিটেড’ নামের একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেন। সে সময় পুরানা পল্টনের ৮৭ নং হোল্ডিংয়ের জমি পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত থাকার অজুহাত দেখিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের নামজারি নামঞ্জুর করেন। কিন্তু একই হোল্ডিংয়ের ভিন্ন নামজারি মামলা মঞ্জুর করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি পরিত্যক্ত তালিকা থেকে অবমুক্ত করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
ফয়জুন্নেছা আক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। বিধিমালা অনুযায়ী যথাযথভাবে সব বিধিগত প্রক্রিয়া শেষে তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
নামজারি নিয়ে এমন অনিয়মের কারণে ফয়জুন্নেছা আক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। বিধিমালা অনুযায়ী যথাযথভাবে সব বিধিগত প্রক্রিয়া শেষে তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দুই বছরের জন্য ‘বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ করে, অর্থাৎ ষষ্ঠ গ্রেডে ৩৫ হাজার ৫০০–৬৭ হাজার ১০ টাকা বেতন স্কেলের নিম্নধাপ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতনে অবনমিতকরণসূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হয় ফয়জুন্নেছাকে।
১ আগস্ট জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ফয়জুন্নেছাকে দেওয়া লঘুদণ্ডাদেশ থেকে অব্যাহতির জন্য নির্ধারিত সময়ে আপিল করায় রাষ্ট্রপতি সদয় হয়ে আদেশ করেছেন, ‘আপিলকারী একজন নবীন কর্মকর্তা’। তাঁর চাকরির বয়স বিবেচনা করে তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতির প্রদান করা হলো।
জানতে চাইলে ফয়জুন্নেছা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নামজারি প্রক্রিয়ায় কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে নামজারি নামঞ্জুর হতেই পারে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমি কাজটি করেছি।’ তাহলে কি মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল ছিল—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলা যায় না। শেষে কী হলো, এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’