আবার যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করতে চান তাকসিম এ খান

ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান
ফাইল ছবি

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ছয় সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান। তিনি অন্য কাউকে এমডির দায়িত্ব না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসে ‘অন ডিউটি’তে থাকবেন বলে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো আবেদনে উল্লেখ করেছেন। যদিও তাঁর এই ‘ভার্চ্যুয়াল অফিস’-এর আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা বোর্ড।

৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর ছুটির আবেদন করেন তাকসিম এ খান। তাতে বলা হয়, নিজের চিকিৎসা এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা পরিবারের সদস্যদের (স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূ) সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া প্রয়োজন। ঢাকা ওয়াসা বোর্ড ১০ আগস্ট থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি অনুমোদন করলেও ওই সময় দাপ্তরিক কাজের কারণে যেতে পারেননি। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত অথবা যাত্রার তারিখ থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গমনের অনুমতি চান।

আবেদনে তাকসিম এ খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় তিনি ‘অন ডিউটি’তে থাকবেন। এই সময়ে ওয়াসার বিভিন্ন শাখা তাঁর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে। আর সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম সহিদ উদ্দিন এমডির পক্ষে বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের যাবতীয় খরচ তিনি নিজে বহন করবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন।

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া তাকসিম এ খানের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তিনি প্রায় প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময় সেখানে থাকেন। গত বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই তিন মাস তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। এর আগে তিনি ২০১৯ সালের ১১ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন।

এবার তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে বসে ‘ভার্চ্যুয়াল অফিস’ করার আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা বোর্ড। গত ৭ জুলাই বোর্ড সভায় সদস্যরা এমডির অনলাইনে দায়িত্ব পালনের তীব্র বিরোধিতা করেন। পরে তাঁকে দুই মাসের ছুটি দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, এই দুই মাস তিনি পূর্ণ ছুটিতে থাকবেন, ভার্চ্যুয়ালি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে তাকসিম এ খানের মন্ত্রণালয়ে ‘অনলাইন ডিউটি’র বিষয়ে চিঠি দেওয়ায় বিস্মিত বোর্ডের সদস্যরাও। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বোর্ড থেকে ছুটির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তিনি অন ডিউটি থাকবেন, বিষয়টি জানা নেই। ছুটি মঞ্জুরের সময় এমন সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে তাকসিম এ খানকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। সংস্থাটির উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক প্রথম আলোকে বলেন, এমডির ছুটির আবেদনের বিষয়ে তাঁর জানা নেই।

ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবারই দেশের বাইরে যাওয়ার আগে একটি অফিস আদেশ জারি করেন তাকসিম এ খান। ওই অফিস আদেশের মাধ্যমে তিনি অনলাইনে অফিস করার বিষয়টি জানিয়ে যেতেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসেই নথিপত্রে স্বাক্ষরসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একজনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে রুটিন দায়িত্ব পালন করতে বলতেন।

গত বছর তাকসিম এ খান ছুটিতে থেকেও নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন। অন্যদিকে তাঁর ছুটির সময়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এমডির দায়িত্ব পাওয়া ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেমও নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন। একসঙ্গে দুজন এমডির দায়িত্ব পালন নিয়ে সমালোচনা হয়। এবার ওয়াসা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, তাকসিম এ খান পূর্ণ ছুটিতে থাকবেন, ভার্চ্যুয়ালি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ) মো. খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাকসিম এ খান নিজের মতো করে ছুটির আবেদন করেছেন। তবে এবার তাঁর ছুটির সিদ্ধান্ত ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকেই হবে।