সংঘর্ষের সময় ১৯ সেপ্টেম্বর আগুন দেওয়া হয় অটোরিকশাটিতে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে
সংঘর্ষের সময় ১৯ সেপ্টেম্বর আগুন দেওয়া হয় অটোরিকশাটিতে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে

খাগড়াছড়ি

সহিংসতার ৯ দিন পরও গ্রেপ্তার হননি কেউ

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের ৯ দিন পেরিয়ে গেছে। সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, সংঘাতে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটলেও এখনো একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি। সংঘাতের পর জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে এখনো অস্বস্তি এবং ভয় কাটছে না পাহাড়ি এই জনপদের।

ভয় কাটাতে সম্প্রীতি সমাবেশ, সমন্বয় কমিটিসহ নানা উদ্যোগের চেষ্টা চলছে। নতুন করে যাতে কোনো সংঘাত মাথাচাড়া দিতে না পারে, তা–ও নজরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা না গেলে এ ধরনের সংঘাত বারবার ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে পিটুনিতে মামুনের মৃত্যু হয়। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা উপজেলা সদরে মামুন হত্যার প্রতিবাদে বাঙালিরা মিছিল বের করেন। তখন পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। নিহত হন ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি। আগুন দেওয়া হয় লারমা স্কয়ারে দোকানপাটে। একই দিন রাতে শহরের স্বনির্ভর এলাকায় গুলিতে রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা নামের দুই তরুণ মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পাশের জেলা রাঙামাটিতে। সেখানেও অনিক চাকমা নামের এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এসব ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানায় দুটি এবং দীঘিনালা থানায় একটি মামলা হয়েছে। সদর থানায় মামুনের স্ত্রী মুক্তা আক্তারের করা মামলায় দুই আওয়ামী লীগ নেতাসহ তিনজনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। এ ছাড়া স্বনির্ভর এলাকায় গুলিতে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া পৃথক মামলাটিতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। এই মামলার বাদী পুলিশ।

অন্যদিকে দীঘিনালা থানার মামলাটিও পুলিশ বাদী হয়ে করেছেন। এতেও অজ্ঞাতনামা লোকজনকে আসামি করা হয়। কিন্তু এসব মামলায় এখন পর্যন্ত একজনকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, এই ঘটনাগুলোর তদন্ত চলছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তবে বুধবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টার অভিযোগে এক পাহাড়ি তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার পৃথক আরেকটি মামলাও করা হয়েছে। ওসি আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, ওই দিন রাতে পাহাড়ি–বাঙালি পুনরায় মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিল। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘাত ঘটে যেত। ছেলেটিকে আটক করার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এদিকে পুড়ে যাওয়া লারমা স্কয়ারের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। পুড়ে যাওয়া ভিটা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করছেন। এখনো তাঁদের ভয়–আতঙ্ক কাটেনি।

দীপন চাকমা নামের এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বলেন, তাঁর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা কল্পনার বাইরে। এখন কীভাবে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। ঋণে জর্জরিত। তারপরও নতুন করে ধারদেনা করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আবার দাঁড়াতে। কিন্তু ভয়ও হয় আবার কিছু যদি ঘটে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে যাতে কোনো ঘটনা ঘটে, সেদিকে প্রশাসনের নজর রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রীতি সভা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সব দলমত, জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যাতে এ ধরনের ঘটনা মাথাচাড়া দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।