জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়হানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরিকল্পিত পরিবেশধ্বংসী তৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

আজ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে লেক ভরাট করে কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করার পর গত রোববার রাতে অধ্যাপক রায়হানের মুঠোফোনে ফোন করে এক ব্যক্তি হত্যার হুমকি দেন বলে তিনি থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) উল্লেখ করেছেন।

অধ্যাপক রায়হান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটা, জলাশয় ভরাটের প্রতিবাদসহ পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক মঞ্চের আহ্বায়ক।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক তাদের বিবৃতিতে অধ্যাপক রায়হানকে হত্যার হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছে, তারা মনে করে, এই হুমকি বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরিকল্পিত পরিবেশধ্বংসী দুর্নীতিপ্রধান তৎপরতা অব্যাহত রাখা এবং রাষ্ট্রব্যাপী চলমান দমন-পীড়ন ও ভয়ের সংস্কৃতি লালন-পালনের ধারাবাহিকতার অংশ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ছাড়াই হাজার হাজার গাছ কেটে, জলাশয় ভরাট করে ও প্রাণ-প্রকৃতির ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একের পর এক ভবন নির্মাণ করে চলেছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, ‘অধ্যাপক রায়হান শুরু থেকেই এসব অপরিকল্পিত ও পরিবেশবিধ্বংসী উন্নয়নের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হুমকিদাতাকে আইনের আওতায় না আনলে আমরা ভেবে নিতে বাধ্য হব যে এই স্বনামধন্য শিক্ষককে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়েই হুমকিদাতা হুমকি দিয়েছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, ২০১৯ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ উপেক্ষা করে, অংশীজনদের মতামতকে আমলে না নিয়ে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ করছে। ১৯০টি বাসা ফাঁকা পড়ে থাকার পরেও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে ১২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আরও ৬টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। দুটি প্রশাসনিক ভবন থাকার পরও ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি অপ্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে প্রশাসন যারপরনাই আগ্রহী। প্রায় ২৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে চক্রাকার সড়ক (সার্কুলার রোড) নির্মাণের পরিকল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজন করার পরিবেশ নষ্ট হবে, বিপুলসংখ্যক গাছ কাটা পড়বে এবং বিপদাপন্ন প্রাণিকুল তাদের বাসস্থান হারাবে।

‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ’—বলা হয় বিবৃতিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আরও বলেছে, ‘আমরা মনে করি অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ও জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় রোধের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণেই কমিশনভোগী ও দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অধ্যাপক রায়হানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’

বিবৃতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪ জন অনলাইনে সই করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌমিত জয়দ্বীপ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাসির উদ্দিন আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পারভীন জলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গীতি আরা নাসরীন, সামিনা লুৎফা, মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও জোবাইদা নাসরীন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরাফাত রহমান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মেষ রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌভিক রেজা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাবিব জাকারিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের ফাহমিদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আর রাজী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী ফরিদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবুল ফজল, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিনু কিবরিয়া ইসলাম প্রমুখ।