রেলের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ

আলটিমেটাম শেষে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ফের শিক্ষার্থীদের অবস্থান

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে গত রোববার চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী অবস্থান নেন
ছবি: জুয়েল শীল

যাত্রী হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আলটিমেটাম শেষ হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ফের অবস্থান নিয়েছেন ১৬ শিক্ষার্থী।

আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের মূল ফটকে ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থী ও নগরের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ২ শিক্ষার্থী।

গত ১৩ জুন অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কিনতে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করে রেলের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ঈদুল আজহার আগে ৭ জুলাই কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে মহিউদ্দিন রনি। ঈদের দিনসহ টানা ১৪ দিন তাঁর এই আন্দোলন দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

মহিউদ্দিন রনির প্রতি সংহতি জানিয়ে গত রোববার চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে অবস্থান নেন চবির চার শিক্ষার্থী। পরদিন তাঁদের সঙ্গে আরও দুজন অংশ নেন। এরপর মঙ্গলবার ৯ শিক্ষার্থী অবস্থান নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়।

একপর্যায়ে রেলস্টেশনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন তাঁরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে ৬ দফা দাবিতে চিঠি দেন। পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ে দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন—চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী আশিকুর রহমান ও ফয়সাল ইসলাম। একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাহিন, মোহাম্মদ মাসুদ ও মাহবুবুল হাসান। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অসীম চন্দ্র দাস ও তৌফিক হাসান। প্রথম বর্ষের মুজাহিদুজ্জামান রাকিব ও মো. আশরাফুল ইসলাম। চবির পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান নাজির ও জয় দেব। ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল হক ও জুলকার নাঈম। ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন চন্দ্র বর্মণ।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের সরকারি মহসিন কলেজ থেকে দুই শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা হলেন—ফজলে রাব্বি ও শাহরিয়ার নাফিজ।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো—টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডটকমের যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করা ও হয়রানির ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া; যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকিটের কালোবাজারি প্রতিরোধ, অনলাইন কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করা ও অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। যাত্রীর চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া; ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক, তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক নজরদারি ও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বাড়ানো এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী কাজী আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক ছয় দাবি পূরণের জন্য গত মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছিলেন। এ দাবি পূরণের জন্য তাঁরা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি। তাই তাঁরা আজ ফের অবস্থান নিয়েছেন।
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানান আশিকুর।