কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, কিছু মানুষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে অপব্যবহার করার চেষ্টা করছেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে ,সরকারের অবস্থান ও তাঁদের দাবি একই জায়গায় মিলে গেছে। তাঁরা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা সরকারি পরিপত্র পুনর্বহাল চেয়েছেন। সরকারও সে জন্য আইনি লড়াই করছে। পরিপত্রটি পুনর্বহাল হয়েছে। এমন অবস্থায় বারবার দাবি পরিবর্তন করে যাঁরা আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ তৈরি করছেন, তাঁরা কোটাপদ্ধতির সংস্কার চান না। তাঁদের অন্য কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, একটা ভালো কিছু হবে। মেধারই মূল্যায়ন হবে এবং বৈষম্যের নিরসন হবে।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। পাশাপাশি লিখিত বক্তব্যের বাইরেও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, কোটা না মেধা। স্লোগানটি যৌক্তিক। আমিও মেধার পক্ষে। তবে স্লোগানের মাধ্যমে যে বক্তব্য হাজির করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তিনি বলেন, ৩৫, ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আবেদনকারী চাকরিপ্রত্যাশীদের মাত্র ২ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর কোটা বিবেচনার বিষয়টি আসে। যাঁরা এই তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তাঁদের মেধাহীন বলাটা যৌক্তিক নয়।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভাবটা এমন, ঘর থেকে এনে কোটায় চাকরি দেওয়া হচ্ছে। তা তো নয়। মেধাবীদের মধ্য থেকেই কোটায় চাকরি দেওয়া হয়। পৃথিবীর সব দেশেই কোটা আছে।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দুই দশক এবং তারও পরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা ক্ষমতায় থাকার সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে নেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে নিগৃহীত হয়েছেন, বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার হয়ে যাঁরা ২ দশমিক ২৭ শতাংশের মধ্যে (বিসিএসে তিন ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ) ঢুকতে পারেন, তাঁরা মেধাবী না হলে কে মেধাবী?
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পিছিয়ে থাকা বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নারী, প্রতিবন্ধী—যাঁরা সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তাঁরা তো আরও মেধাবী। তিনি বলেন, কোটা বৈষম্য তৈরি করে, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কোটার উদ্দেশ্য বৈষম্য নিরসন।
কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চেতনার (স্পিরিট) সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পিছিয়ে থাকাদেরও এগিয়ে নিতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় দাবি পরিবর্তন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে জারি করা সরকারের পরিপত্র যখন হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হলো, তখন সাময়িকভাবে কিছুটা ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে। যখন হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আপিলও করল, তখন সরকারের অবস্থান ও আন্দোলনকারীদের অবস্থান একই হয়ে গেল।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার যখন সর্বোচ্চ আদালতে আইনি প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেছে, তখন কমিশন গঠনের সুযোগ নেই। সেটা অসাংবিধানিক হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সেই অসাংবিধানিক দাবি করা শুরু করলেন। নির্বাহী বিভাগ যখন আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মীমাংসার পথে এগোচ্ছে, তখন আন্দোলনকারীরা আবার তাঁদের দাবি পরিবর্তন করে বলা শুরু করেছেন, বিচার বিভাগ নয়, নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে সমাধান চাই। তাঁরা জাতীয় সংসদে আইন পাসের দাবিও করছেন। অথচ সর্বোচ্চ আদালতের প্রক্রিয়া পুরোপুরি সমাপ্ত না করে সরকার এ বিষয়ে কোনো কিছুই করতে পারবে না।
বিচারাধীন বিষয়ে অনেকে ভুল করে বক্তব্য দেন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কথা বলা আর আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলা—দুইটা দুই জিনিস। কখনোই সাবজুডিস ম্যাটারে (বিচারাধীন বিষয়), বিশেষ করে যা সর্বোচ্চ আদালতে আছে, সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দিতে পারে না। এগুলো বলার অর্থ হলো আপনি অসাংবিধানিক কাজ করছেন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের দাবি বারবার পরিবর্তন হচ্ছে কেন? একেকবার রাষ্ট্রের একেক অঙ্গের কাছে দাবি করা হচ্ছে কেন? এতে কী প্রমাণিত হয়? এতে প্রমাণিত হয়, তাঁরা আদৌ কোনো বিষয় নিয়ে জ্ঞাত নয়।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, কিছু মানুষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে, শিক্ষার্থীদের আবেগকে অপব্যবহার করার চেষ্টা করছে। এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলন অব্যবহারের চেষ্টা করেছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি।’