মামলা করার ‘পর্যাপ্ত উপাদান’ না পেয়ে ঢাবির সেই ছাত্রকে ছেড়ে দিল পুলিশ

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল
ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট

‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার’ অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ যে ছাত্রকে থানায় দিয়েছিল তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। তারা বলেছে, ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করার ‘পর্যাপ্ত উপাদান’ পায়নি। তাই আজ শুক্রবার দুপুরে মেফতাহুল মারুফ নামের ওই ছাত্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে মেফতাহুলকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেছিল হল কর্তৃপক্ষ৷

মেফতাহুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ ও বিভাগের ১৪তম ব্যাচ) ছাত্র৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা ও ছাত্রলীগের কর্মসূচির কারণে দুর্ভোগ নিয়ে আলোচনার পর প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে তাঁকে পুলিশে দেন হল প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন৷ প্রাধ্যক্ষ দাবি করেছিলেন, মেফতাহুলের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার’ প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে৷

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার আজ বিকেলে প্রথম আলোকে জানান, মেফতাহুলকে তাঁর বিভাগের শিক্ষকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘সে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছিল, যা হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, এটা সঠিক৷ কিন্তু সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা ফৌজদারি আইনে মামলা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত উপাদান আপাতত পাওয়া যায়নি৷ তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিভাগের শিক্ষকদের জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে তদন্ত অব্যাহত আছে৷ পরবর্তী সময়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’

মেফতাহুলকে মুক্ত করতে সকালে থানায় গিয়েছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা৷ থানা থেকে বের হওয়ার পর ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী মেফতাহুলকে একটি সিএনজিতে করে নিয়ে যান বলে জানান পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেফতাহুল মুক্ত হওয়ার পর থানা থেকে টিএসসিতে যাওয়ার পথে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা সালেহউদ্দিন সিফাত, আহনাফ সাঈদ খান ও আবদুল কাদেরের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ৷

এদিকে যে মেসেঞ্জার গ্রুপে আলোচনার জন্য মেফতাহুলকে থানায় দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তাঁর বিভাগ ও ব্যাচের সব শিক্ষার্থী রয়েছেন৷ গ্রুপটির নাম ‘চৌদ্দশিখা’৷ মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে ১৭ আগস্ট ছাত্রলীগের কর্মসূচির কারণে রাস্তায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করে চৌদ্দশিখা নামের গ্রুপটিতে কিছু কথা লিখেছিলেন মেফতাহুল মারুফ৷ তিনি লেখেন, ‘সিরিজ বোমা হামলা চালাইছে জামাআতুল মুজাহিদীন নামে একটা জঙ্গি সংগঠন বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে, সেই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত।’ মেফতাহুল ওই লেখায় আরও উল্লেখ করেন ক্ষমতায় থাকায় ওই হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াত দায়ী হলে ২০০৮ সালের পরের সব জঙ্গি হামলার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী।