সাম্প্রতি সংঘর্ষে থানাগুলোতে পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হওয়ার পর কল করেও যথেষ্ট সহায়তা পাননি।
বর্তমানে সহায়তা চেয়ে কল করা ব্যক্তিদের সেনাবাহিনী থেকে সরবরাহ করা নম্বর দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশনির্ভর এই সেবা কার্যক্রমে বড় ধস নেমেছে। বিভিন্ন থানায় পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হওয়ায় লোকজন ৯৯৯ নম্বরে কল করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত কার্যক্রমটি এখন অল্প কিছু লোকবল নিয়ে কোনোরকমে চলছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক দিনে যেসব কল এসেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি, অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ। অল্প কিছু ছিল পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা। এখন যাঁরা ৯৯৯ নম্বরে কল করছেন, তাঁদের বলা হচ্ছে, থানায় পুলিশ সদস্য নেই। এমনকি থানাগুলোতে পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হওয়ার পর কল করেও যথেষ্ট সহায়তা পাননি। সহযোগিতার জন্য কল করা ব্যক্তিদের সেনাবাহিনী থেকে সরবরাহ করা নম্বর দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশনির্ভর এই সেবা কার্যক্রমে বড় ধস নেমেছে। লোকজন কল করেও ৯৯৯–এর সেবা পাচ্ছেন না।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমিতসংখ্যক জনবল নিয়ে কাজ চলছে। যেহেতু থানায় পুলিশ নেই। তাই কল এলেও পুলিশের সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত এই জরুরি সেবার সঙ্গে পুলিশ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সম্পৃক্ততা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্য নিয়ে ৯৯৯ কার্যক্রম চালু করা হয়।
জরুরি সেবা ৯৯৯ সূত্রে জানা গেছে, দিনে গড়ে ২০ থেকে ২২ হাজার কল আসে বিভিন্ন অভিযোগ ও সহায়তা চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে। ৯৯৯-এ এক মিনিটে ১২০টির মতো কল গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি পালায় ৮০ জন কর্মী (কল টেকার) কল গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় স্তরে কলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে কি না, তা দেখেন ১৬ জন (ডিসপ্যাচার)। তৃতীয় স্তরে পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করেন ৪ জন (সুপারভাইজার)। এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত অনেক পুলিশ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকায় কাজে যুক্ত হচ্ছেন না।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমিতসংখ্যক জনবল নিয়ে কাজ চলছে। যেহেতু থানায় পুলিশ নেই। তাই কল এলেও পুলিশের সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক
এই কয়দিনে কতসংখ্যক কল এসেছে জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, এখন সীমিত জনবল নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তাই কত কল এসেছে সে হিসাব রাখা হয়নি।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে থানাগুলোতে অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হত্যা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৯৯৯-এ আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা সাহায্য চেয়ে কল করেছিলেন কি না, এমন প্রশ্নে তবারক উল্লাহ বলেন, কল করেছিলেন, কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া গেছে। যেমন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা থেকে কল পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চার পুলিশ সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে।
উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট এনায়েতপুর থানায় হামলার ঘটনায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সময়ে সংঘাত–সংঘর্ষের সময় সহায়তা চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে দ্বিগুণ হারে কল এসেছিল। বিশেষ করে গত ১৯ জুলাই সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার কলের বিপরীতে সেবা দেওয়া হয়। তবে সে সময়ও পুলিশ মাঠের সংঘাত দমনে ব্যস্ত থাকায় ও নিজেরা আক্রমণের শিকার হওয়ায় জনসাধারণকে চাহিদা অনুসারে সেবা দিতে পারেনি।
বনানী ও মহাখালীতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলঘর, রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ভবনে আগুন লাগানোর সময় ৯৯৯-এ কল করেও ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংঘাত–সংঘর্ষের সময় গত ১৬ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৯৯৯-এর কলের হিসাব থেকে জানা গেছে, ওই ৮ দিনে সারা দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ কলের বিপরীতে সেবা দেওয়া হয়েছে। জরুরি পুলিশ সহায়তা ৬ হাজার ৯১৯টি, ফায়ার সার্ভিসের জন্য ৮৪৩টি এবং অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে ২ হাজার ২০৫টি সেবা দেওয়া হয়।