দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজার ও দরবার শরিফে হামলার প্রতি আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে ‘গণপ্রতিরোধ যাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা
দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজার ও দরবার শরিফে হামলার প্রতি আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে ‘গণপ্রতিরোধ যাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা

মাজার–দরবারে হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে ‘গণপ্রতিরোধ যাত্রা’

মাজার–দরবারে হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে গণপ্রতিরোধ যাত্রা করেছেন পীর–ফকিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণ থেকে এই যাত্রা শুরু হয়। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘মাজারে হামলা চলবে না, দেশটা কারও বাপের না’, ‘যে মত হামলা করে তার আগুন নিভিয়ে দাও’, ‘মব জাস্টিস চলবে না, দেশটা কারও বাপের না’, ‘মাজারে হামলা করে, সরকার কী করে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্রভৃতি স্লোগান।

গণপ্রতিরোধ যাত্রায় অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ডও দেখা গেছে। সেসবে লেখা ছিল ‘হামলাকারীকে লাল কার্ড, সরকারকে হলুদ কার্ড’, ‘বহু মত বহু পথের বাংলাদেশ’, ‘মাজার–দরবারে সুরক্ষা সরকারকেই দিতে হবে’, ‘ফ্যাসিবাদী হামলা রুখে দাঁড়াও বাংলা’, ‘মব জাস্টিস চলবে না’ প্রভৃতি।

হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণ থেকে এই যাত্রা সচিবালয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকে গণপ্রতিরোধ যাত্রার আয়োজকদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয়ে যান। তাঁরা সেখানে পাঁচ দফা দাবি–সংবলিত একটি স্মারকলিপি জমা দেন।

গণপ্রতিরোধ যাত্রা শুরুর আগে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে দাবি–সংবলিত একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ। সেটা সাংবাদিকদের মধ্যেও বিলি করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জানানো সেসব দাবির প্রথমটি হলো মাজার ও দরবারগুলোর ওপর চালানো প্রতিটি হামলায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যেহেতু সরকার ইতিমধ্যেই তাঁদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে, ফলে সে ঘোষণা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছে, সেটি দেখতে চান। দ্বিতীয় দাবি হলো, মাজারকে মাজারের মতো থাকতে দিয়ে সরকারকে সব মাজার ও দরবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভেঙে ফেলা প্রতিটি মাজার সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্নির্মাণ করে দিতে হবে।

তিন, মাজারের ওপর হামলায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চার, সব ধরনের মব জাস্টিস, মোরাল পুলিশিং, নারীবিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। যাঁরা এগুলো করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পাঁচ, সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দিতে হবে এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে শুধু ভিন্ন মতের হওয়ার কারণে কিংবা যেকোনো মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ভালো বা মন্দ কথা বা উক্তির জন্য কেউ কারও ওপর হামলা করতে পারবে না। হামলা করলে সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সারা দেশের মাজার-দরবারে যেসব গোষ্ঠী যে কারণেই হামলা চালাক না কেন, তার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন খুবই জরুরি। গণ–অভ্যুথানের মধ্য দিয়ে আসা এই অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত মাজার ও দরবারগুলোর সুরক্ষায় কোনো দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মাজার ও দরবার শরিফে হামলার প্রতিবাদে গণপ্রতিরোধ যাত্রা শুরু হওয়ার আগে হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে

মাজার–দরবারে হামলা করে ফৌজদারি অপরাধ করা হয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশে কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেন, এই কাজ (মাজারে হামলা) করা শুরু হয়েছে, যখন শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে ‘আমি যেকোনো সময় চট করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারি’। এই অপরাধের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার এসেছে, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও উৎখাত করা। মাজার বনাম ইসলামের বিকল্প—বিষয়টিকে যেন এভাবে না দেখা হয়, সেই আহ্বানও জানান তিনি।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাজার–দরবারে হামলা করা হচ্ছে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এসব হামলা জনগণের অর্জনকে নস্যাৎ করে অস্থিতিশীল করে রাখার এবং সেই সুযোগ নিয়ে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে, এ রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।

সহনশীলতা ধর্ম ও রাষ্ট্রের জন্য জরুরি উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, এই অভ্যুত্থান এমন একটি বাংলাদেশ চায়, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার পরিচয়, রাজনৈতিক বিশ্বাস—সবকিছু নিয়ে মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে।

সমাজে ফ্যাসিবাদী তৎপরতা এখনো বহাল আছে মন্তব্য করে শিল্পী অরূপ রাহী বলেন, তারা এই গণ–অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

হামলায় মর্মাহত ও চিন্তিত উল্লেখ করে আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া হোসাইন বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। কিন্তু সুযোগসন্ধানী উগ্রগোষ্ঠী বারবার আমাদের ওপর হামলা করে অশান্তি সৃষ্টি করছে। এমন একটা পরিবেশ এ দেশে তৈরি হোক, ভিন্ন মত বা পথের জন্য কারও ওপর কোথাও হামলা হবে না, নির্যাতন হবে না।’

গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন শিল্পী অমল আকাশ, নারী নেত্রী সীমা দত্ত, সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, সুরেশ্বরী দরবার শরিফের ভক্ত নূরী পাগল প্রমুখ।