মশার কামড় থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা
মশার কামড় থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা

মশাবাহিত রোগ হওয়ার আগেই দরকার নিয়ন্ত্রণ

অন্য প্রাণীর কারণে প্রাণ হারায় মানুষ—এমন তালিকায় দ্বিতীয় ভয়ংকর প্রাণী হলো ‘মানুষ’। তাহলে প্রথম কে? সিংহ, কুমির নাকি সাপ?

না, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী বিবিসি সায়েন্স ফোকাসে পাওয়া বিশ্বব্যাপী এক পরিসংখ্যানে প্রাণীদের আঘাতে মানুষের প্রাণ হারানোর একটি তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, সিংহের কারণে বছরে সারা বিশ্বে প্রাণ যায় ২০০ মানুষের। কুমিরের আক্রমণে এক হাজার। আর সাপের বিষে মারা যায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মানুষের হাতেই বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার জন মানুষ প্রাণ হারায়। অবিশ্বাস্য হলেও এ তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী হলো ‘মশা’। যার কারণে প্রতিবছর সাড়ে সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে ক্ষুদ্র আকার হওয়ায় এই প্রাণীকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে সুরক্ষিত থাকতে হবে মশার কামড় থেকে।

মশা নিয়ন্ত্রণে করণীয়

‘মশা মারতে কামান দাগা’ প্রবাদটির প্রচলন শুরু হয়েছে সম্ভবত মশার দ্বারা মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দেখেই। বাস্তবে এ প্রাণীর কামড় থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা। মশাবাহিত রোগ হওয়ার আগেই দরকার নিয়ন্ত্রণ। এই নিয়ন্ত্রণটা কখন, কীভাবে এবং কাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন নবজাতক ও শিশুবিশেষজ্ঞ এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাঈমা সাদিয়া।

প্রথমেই দরকার মশার বংশবিস্তার রোধ করা। যেসব স্থানে মশা ডিম পাড়ে, সেগুলোকে ধ্বংস করতে হবে। তাই বাড়ির আঙিনা ও ঘরের ভেতরে যেকোনো পাত্রে জমে থাকা পানি তিন দিন অন্তর ফেলে দিতে হবে।

মশা জন্মানোর সম্ভাব্য স্থান সম্পর্কে ডা. নাঈমা সাদিয়া জানান, প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্র, কোমল পানীয়র বোতল, কলাপসিবল গেটের নিচের অংশ, ফেলে দেওয়া টায়ারের অংশ, দইয়ের ফেলে দেওয়া পাত্র, ছাদবাগানের ফুলের টব, পানির মিটারের কাছের গর্ত, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত কর্কশিট, সিরামিকের পাত্র, সিঁড়ির পাশের ভাঙা হাতল, যানবাহনের অংশ, গাড়ির গ্যারেজসহ অনেক কিছুতেই ডেঙ্গু মশার লার্ভা থাকে। তাই এসব জায়গায় জমে থাকা পানি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিষ্কার করা জরুরি।

মশা তাড়াতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা

মশার সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে নিতে হবে কিছু ব্যক্তিগত সুরক্ষা। এ বিষয়ে ডা. নাঈমা সাদিয়া বলেন, বাইরে যাওয়ার সময় শরীরের অনাবৃত অংশে বাজারে প্রচলিত মশানিরোধক রিপেলেন্ট-ক্রিম বা জেল ব্যবহার করলে মশার সংক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে।

ঘুমানোর সময় ঘরের জানালা পুরোপুরি বন্ধ রাখলে ঘরে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। তাই সমাধান হিসেবে জানালায় মশার নেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ ছাড়া বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ভেষজ কিছু গাছ আছে, যেগুলো ঘরে টবের মধ্যে সাজিয়ে রাখলে মশার আনাগোনা কমে। যেমন রোজমেরি, পুদিনা, ভুঁইতুলসী, গাঁদা, রসুনগাছ ইত্যাদি।

দিনে বা রাতের বেলা ঘুমের আগে আলসেমি লাগলেও মশা তাড়াতে ব্যবহৃত কার্যকর উপায়, যেমন মশারি টানানো, কয়েল-স্প্রে ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ, শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের জন্য অবশ্যই এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

মশাবাহিত রোগ হওয়ার আগেই দরকার নিয়ন্ত্রণ

যাঁদের প্রতি নিতে হবে বিশেষ যত্ন

ডেঙ্গু—বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগের মধ্যে অন্যতম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কম। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। কিন্তু মৃত্যুর হার বিবেচনায় নারীর সংখ্যাই বেশি। আর শূন্য থেকে পাঁচ বছর এবং ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগীদের সংখ্যা এ বছর বেশি। এ বয়সীরাই কেন বেশি?

এ প্রসঙ্গে নবজাতক ও শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. নাঈমা সাদিয়া জানান, এ বয়সীরা অন্যদের তুলনায় বাড়ির বাইরে বেশি বের হন। আর এ বয়সীদের মধ্যে যাঁরা হাসপাতালে আসছেন, দেখা যায় তাঁদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়ে গেছে, কিন্তু জানতে পারেননি। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন ডেঙ্গু জ্বর হয়, তখন খুব জোরালোভাবে হয়। ফলে জটিল পরিস্থিতিতে পড়ার আশঙ্কা বেশি। তাই অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। সে জন্য পরিবারের শূন্য থেকে পাঁচ এবং ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীসহ বয়োজ্যেষ্ঠ ও ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত এবং গর্ভবতী নারী সদস্যদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।