নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগের রাতে ভোটারদের মধ্যে টাকা বিলি করার অভিযোগে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরীর শ্বশুরকে বহনকারী একটি গাড়ি আটক করেছে স্থানীয়রা। মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে উপজেলার চর বাটা ইউনিয়নের কাজল মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শাবাব চৌধুরী নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকে ভোট করছেন।
একই গাড়িতে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর এপিএস সুনীল কুমার দাশ ও গাড়ি চালকসহ আরও চারজন ছিলেন।
খবর পেয়ে শাবাব চৌধুরীর সমর্থকেরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীর (সেলিম) সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খায়রুল আনম চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এবারের নির্বাচনে তাঁর প্রতীক দোয়াত-কলম।
অভিযোগ উঠেছে, শাবাব চৌধুরীর সমর্থকদের হামলায় যুবলীগ নেতা হাসান মাহমুদসহ তিনজন আহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই খায়রুল আনম চৌধুরীর সমর্থক।
পরে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা ওই এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ একজনকে আটক করেছে।
এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীর (সেলিম) সমর্থকদের অভিযোগ, রাত আটটার দিকে চরবাটা ইউনিয়নের কাজল মার্কেট এলাকায় একটি কালো রঙের গাড়ি থেকে নেমে সংসদ সদস্য একরামুল করিমের এপিএস সুনীল কুমার দাশসহ কয়েকজন স্থানীয় ভোটারের টাকা বিলি করছিলেন। এ ঘটনা দেখে ফেলেন যুবলীগ নেতা হাসান মাহমুদ। ওই সময় তিনি আশপাশের লোকজনকে জড়ো করে গাড়িটি ঘেরাও করেন। গাড়ির ভেতরে থাকা মো. শাহীন নামে একজন নিজেকে শাবাব চৌধুরীর শ্বশুর পরিচয় দেন।
স্থানীয়রা জানান, টাকা বিলির অভিযোগে গাড়ি আটকের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি (লাইভ) প্রচার করা হলে অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে কয়েক শ লোক জড়ো হন। তখন উত্তেজিত লোকজন মো. শাহীন ও সুনীল কুমার দাশসহ গাড়িতে থাকা লোকজনকে আটকে রাখেন।
পরে শাবাব চৌধুরীর অনুসারীরা সেখানে পৌঁছলে দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় হাসান মাহমুদসহ খায়রুল আনম চৌধুরীর তিনজন সমর্থক আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তখন মো. শাহীন ও সুনীল কুমার দাশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সুবর্ণচরের নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে তাৎক্ষনিক সাংবাদিক সম্মেলন করেন এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের প্রভাবিত করতে রাতের বেলা টাকা বিলি করার সময় স্থানীয়রা আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর শ্বশুরসহ কয়েকজনকে ধরে ফেলেছে। তাঁরা কেউই এখানকার ভোটার না। বহিরাগতরা আমার নির্বাচনী এলাকায় এসে টাকা বিলি করে ভোট কিনতে চাচ্ছে।’ তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুনীল কুমার দাশ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কাজল মার্কেট এলাকায় যাননি। যে গাড়িটি লোকজন আটক করেছে, ওই গাড়িতে প্রার্থী শাবাব চৌধুরীর শ্বশুর ভোটের পরিস্থিতি দেখতে বেরিয়েছিলেন। টাকা বিলি করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশে কোন প্রভাব ফেলবে না।