ক্ষমতাশালীদের দায়মুক্তি দিতে ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

গণপরিষদ আন্দোলন ও রাষ্ট্রচিন্তা আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা। সোমবার, জাতীয় প্রেসক্লাব
ছবি: প্রথম আলো

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ক্ষমতাশালীদের দায়মুক্তি দেওয়ার জন্য ব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রী যা করবেন, এমপি যা করবেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা যা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেই আপনাকে আটক করা হবে এই আইনের মাধ্যমে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, ধর্মানুভূতিতে আঘাত হবে—নানান কিছু বলে আপনাকে যেকোনো সময় তুলে নেওয়া হবে। এই আইন দায়মুক্তির একটি অংশ।’

বিদ্যমান সাংবিধানিক সংকট উত্তরণে গণতান্ত্রিক শক্তির করণীয় শিরোনামে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে গণপরিষদ আন্দোলন ও রাষ্ট্রচিন্তা।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘পাকিস্তান আমলের মতো সামরিক শাসন ও অন্যান্য সময়ের মধ্য দিয়ে নতুন ২২ পরিবার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। তাদের ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীভূত করা, আরও বিকশিত করা, নিরাপদ করার জন্য সংবিধানে যা যা সংস্কার দরকার, করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন না থাকলেও তাদের কিছু আসে–যায় না। কারণ, তারা যা কিছু তা–ই করতে পারে।’

উদাহরণ দিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ধরেন, রাতে একজনকে তুলে নেওয়া তো আইনে নাই। কিন্তু রাতে তুলে নিচ্ছে। নিয়ে গিয়ে গুম করে রাখছে ২০ মাস। কিংবা কারও খবরই পাওয়া যাচ্ছে না। কিংবা ক্রসফায়ারে খুন করছে। এটাকে আবার আইনসংগত করার জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের আইনের মধ্যে কিছু টোটকা রাখে। ডিজিটাল নিরাপত্তা হচ্ছে সেই ধরনের আইনগত সংস্কার।’

বর্তমান পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে খেয়াল করবেন যে প্রথম আলোর সংবাদ নিয়ে যখন কথাবার্তা হচ্ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের কথা হচ্ছিল। তখন বেশ কিছু বিবৃতি আসে পত্রিকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক, লেখক–শিল্পী–সাংবাদিকদের সংগঠন পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে। বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের এই যে অবস্থা, এই চিত্রটা ভয়ংকর।’

ক্ষমতাবান যাঁরা, তাঁদের রক্ষার জন্য সংবিধানের মধ্যে নানা কিছু আছে। সংবিধানের বাইরেও বিভিন্ন রকম আইন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এই শিক্ষক।

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন হয়েছে, তখনই কিন্তু কথা উঠেছে। এই আইন দিয়ে সবাই নিষ্পেষিত, নিপীড়িত হচ্ছে। যারাই ভালো চিন্তা করছে, তাদের মধ্যেই শঙ্কা কাজ করছে। কখন কী করে ফেলে।’

মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে, পরবর্তী সময় সংবিধান তৈরি হয় তার সঙ্গে বেইমানি করে বলে মনে করেন রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মানুষের ন্যূনতম ভোটের অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’

রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান সংবিধানকে সংস্কার করে গণতান্ত্রিক করতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাসদ-মার্ক্সবাদী দলের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, সাবেক সচিব কাসেম মাসুদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদ, নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়াজ রহমান প্রমুখ।