বেনজীর আহমেদের সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানে দুদক

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
ছবি: বেনজীর আহমেদের ফেসবুক থেকে নেওয়া

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে গত ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু গণমাধ্যমে তাঁর (বেনজীর) বিষয়ে একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদক আইন অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করেছে।

দুদক সচিব বলেন, ১৮ এপ্রিল দুদকে একটি সভা হয়। সেখানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিবেচনায় নিয়ে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। দুদক আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য দুদক গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন সংস্থার উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে সম্প্রতি দুই পর্বে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন (সাবেক আইজিপির অপকর্ম-১ ও ২) প্রকাশ করেছে কালের কণ্ঠ। গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত প্রথম পর্বের মূল শিরোনাম ছিল ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীরের পরিবারের মালিকানায় রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ইকো রিসোর্ট। এই রিসোর্টের পাশে আরও ৮০০ বিঘা জমি কিনেছে তাঁর পরিবার। এ ছাড়া পাঁচ তারকা হোটেলের ২ লাখ শেয়ারও রয়েছে তাঁদের। ঢাকার বসুন্ধরায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটও রয়েছে বেনজীরের পরিবারের। এসব সম্পত্তি অবৈধ টাকায় কেনা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

‘সাবেক আইজিপির অপকর্ম-২’ প্রকাশ করা হয় ২ এপ্রিল। এই পর্বের মূল শিরোনাম ছিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’। কালের কণ্ঠ–এর এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজীপুর সদরের ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর ভাওয়াল রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। এই রিসোর্ট করতে বনের ২০ বিঘা জমি দখল করা হয়েছে। এই রিসোর্টের ২৫ শতাংশের মালিকানা বেনজীর আহমেদের পরিবারের। এ ছাড়া দুবাইয়ে শতকোটি টাকার হোটেল ব্যবসা, সিঙ্গাপুরে সোনার ব্যবসা এবং থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় তাঁর পরিবারের জমি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কালের কণ্ঠ–এর প্রতিবেদনের পর ২০ এপ্রিল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন বেনজীর আহমেদ। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, তাঁর পরিবারের যে সম্পদ রয়েছে, তা বৈধ এবং এর হিসাব ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ রয়েছে। অবৈধ যেসব সম্পত্তির কথা বলা হচ্ছে, তা কেউ প্রমাণ করতে পারলে ওই ব্যক্তি বা গ্রুপকে সেই সম্পত্তি তিনি বিনা পয়সায় লিখে দেবেন বলেও ভিডিওতে দাবি করেন।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় র‌্যাবে দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এই বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন। যার মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখন আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন বেনজীর আহমেদ।

বেনজীরের সম্পত্তি নিয়ে রিট

বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন একজন আইনজীবী। রিটে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ ও ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুদকের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন আবেদনকারী হিসেবে সোমবার এই রিট করেন।

আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশিত ওই সংবাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চেয়ে ৪ এপ্রিল দুদকের কাছে আবেদন করা হয়। এতে ফল না পেয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ১৮ এপ্রিল দুদক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। এর কোনো জবাব না পেয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়েছে।

সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘বলছি না বেনজীর আহমেদ অবৈধভাবে বা দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করেছেন বা করেননি। তবে প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অনুসন্ধান হওয়া উচিত। কারণ, প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জনগণ মনে করে, পুলিশের সাবেক আইজি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদক অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিলে এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটিত হবে। আইন দুদককে স্বেচ্ছায় অনুসন্ধানের ক্ষমতা দিয়েছে।’