বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর ওরফে পরশ হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ শিক্ষার্থী।
আজ শনিবার বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কের মাঝে অবস্থান নিয়ে ওই শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তাঁদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এগুলোর একটিতে লেখা ছিল ‘সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ৪০৪ নট ফাউন্ড’।
ইন্টারনেটে তথ্য আদান-প্রদানের একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল (এইচটিটিপি)। এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেট থেকে মুছে ফেলা বা সরিয়ে নেওয়া কোনো তথ্য খুঁজতে গেলে গ্রাহকের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ‘এইচটিটিপি ৪০৪ নট ফাউন্ড’। এর অনুকরণে নিরাপত্তাহীনতার প্রতিবাদে এক ছাত্রের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ৪০৪ নট ফাউন্ড’।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া পাঁচজনের হাতেই ছিল আলাদা প্ল্যাকার্ড। অন্যগুলোতে লেখা ছিল, ‘সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের নিশ্চয়তা চাই’, ‘ক্যাম্পাস নিরাপদ কিন্তু রাষ্ট্র?’, ‘নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা চাই’ ও ‘হাউ টু সার্ভাইভ ইন দিস কান্ট্রি ১০১-ফারদিন নূর’ (ফারদিন নূরের ফেসবুকের কভার ছবির ক্যাপশন)।
কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র তাহমিদ হোসেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আজকে এখানে দাঁড়ানোর মূল উদ্দেশ্য, এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন, যা খুবই উদ্বেগজনক ও ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো বিষয়। এখন পুলিশের তদন্তপ্রক্রিয়া চলছে। আইনের প্রতি আমাদের আস্থাও আছে। কিন্তু এর আগে এই প্রশ্নটা আসা উচিত যে ঢাকার মতো রাজধানী শহরে একজন শিক্ষার্থী রাতের বেলায় বের হওয়ার পর কেন তাঁর কোনো খোঁজখবর পাওয়া গেল না। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টা আমাদের সবার জন্য শঙ্কার। আজ যে বিষয়টা ফারদিন নূরের সঙ্গে ঘটেছে, কাল সেটা আরও অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও ঘটতে পারে। আমরা এ বিষয়টির একটা সঠিক সমাধান চাই।’
কর্মসূচিতে মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়া বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় ফারদিন নূরের এক সহপাঠীকে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের চিন্তাটা হলো, আমরা সিস্টেমের ওপর ভরসা রাখি। যদি মনে হয় সিস্টেম কাজ করছে না, তখন রাস্তায় নামব। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি কারণ, ফারদিন নূরের যে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, তিনি রাজধানী শহরে যে তিন দিন নিখোঁজ ছিলেন, তা কেন হবে। কেন একজন মানুষ এভাবে মারা যাবেন—এই বিষয়টা মানুষের মাথায় ঢুকতে হবে।’ বুয়েট বন্ধ থাকাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকার মূল কারণ বলে জানান তিনি।
৪ নভেম্বর ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিন নূরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন রাজধানীর রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ফারদিনের বন্ধু আয়াতুল্লাহ বুশরার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে বুশরাকে রামপুরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ বিষয়ে ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অ্যাকচুয়ালি (প্রকৃত) কী ঘটনা, এখনো বের করতে পারিনি।’