শীতের সকালে কাজের জন্য গ্রাম থেকে শহরে ছুটছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। চব্বিশহাজারি এলাকা, রংপুর, ৩ জানুয়ারি
শীতের সকালে কাজের জন্য গ্রাম থেকে শহরে ছুটছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। চব্বিশহাজারি এলাকা, রংপুর, ৩ জানুয়ারি

উত্তরে কনকনে শীত, বিস্তৃতি বাড়তে পারে শৈত্যপ্রবাহের

চলতি মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলে। গতকাল বুধবার থেকে পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে এই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবারও এসব অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে।

এই শৈত্যপ্রবাহ রাজশাহী বিভাগের কিছু অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করতে পারে। ফলে তীব্র শীতে ওই অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, অতি ঘন কুয়াশার কারণে আজ উড়োজাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকালের মতো আজও দেশে ঠান্ডা অনুভূত হবে।

চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়—৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া দিনাজপুরে সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নীলফামারীর ডিমলায় সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল গতকাল। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামলে তাকে সাধারণত শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

এ ছাড়া গতকাল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১০ দশমিক ৫, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১০ দশমিক ৪ এবং রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।

উত্তরের জনপদে পৌষের শুরু থেকেই শীত জেঁকে বসে। তবে পৌষের শেষার্ধে এসে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিল। গত মঙ্গলবার রাতভর হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশার দাপটে জবুথবু হয়ে পড়ে উত্তরের জনজীবন।

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হলেও গতকাল সকালে পঞ্চগড়ে সূর্যের দেখা মেলে। গতকাল সকালে রোদের মধ্যে গায়ে পাতলা শার্ট পরে জমিতে ভুট্টাবীজ বপন করছিলেন সদর উপজেলার কৃষক সলেমান আলী। শীতের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাতিত যেই হারে ঠান্ডা (শীত) ছিল, ওইখান ঠান্ডা এ্যালা (এখন) থাকিলে কাজ করা কঠিন হয়ে গেলে হয়।’ হোটেলশ্রমিক খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় তিন দিন থেকে রোদ নাই। কী যে কষ্টখান গেল।’

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল উত্তরের আরও কিছু জেলার তাপমাত্রা শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি ছিল। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে ১১ ডিগ্রি, নওগাঁর বদলগাছীতে ১১ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি, বগুড়ায় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও রংপুরে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা নেমে এসেছিল।

পাবনার বেড়া উপজেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বেড়ার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া নূরী খাতুন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘খিদ্যার কষ্ট এখন আর তেমন গায়ে লাগে না। কিন্তু শীতের কষ্ট তো আর সহ্য করব্যার পারতেছি না। ঘরে গরম কাপড় নাই, তার ওপর ভাঙা বেড়া দিয়্যা ঘরে হর হর কইর‌্যা ঠান্ডা ঢোকে।’

উত্তরের জেলাগুলো ছাড়াও দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই তাপমাত্রা এখন বেশ কম। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে তা রাজশাহী বিভাগের কিছু অঞ্চলে বিস্তার লাভ করতে পারে।

[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিবেদকেরা]