বিএনপির আরও ৩৯ নেতা-কর্মীর সাজা

  • তিন মাসে ঢাকায় অন্তত ৩৪টি মামলায় ৫৮৪ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর সাজা হয়েছে।

  • মামলাগুলোতে বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা, যানবাহন ভাঙচুর, আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত

আরও তিনটি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩৯ জন নেতা–কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। গতকাল সোমবার এই রায় ঘোষণা করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।

দণ্ডিত নেতা–কর্মীরা বিএনপির ঢাকা মহানগরের থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী। রায়ের সময় তাঁরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

এ নিয়ে গত তিন মাসে ঢাকায় অন্তত ৩৪টি মামলায় ৫৮৪ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর সাজা হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের একাধিক মামলায়ও সাজা হয়েছে। মামলাগুলোতে বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা, যানবাহন ভাঙচুর, আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ঢাকায় গতকাল সাজা হওয়া তিন মামলার দুটি হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। এর একটি মামলা হয় ঢাকার উত্তরখানে। অভিযোগ পুলিশকে মারধর। এতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ১৬ জন নেতা-কর্মীকে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীম এই রায় দেন। মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টার দিকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে উত্তরখানের তেরমুখ লোহার সেতুর কাছে গোপন বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে উত্তরখান থানা-পুলিশ সেখানে যায়। তখন বিএনপির ২৪ জন নেতা-কর্মী পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। তাঁরা পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছোড়েন।

মামলাটিতে গত ২০ জুলাই ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬ জন পুলিশ সদস্যকে আদালতে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের কাছ থেকে তাঁরা ন্যায়বিচার পাননি।

রামপুরা থানার মামলা

২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দায়ের করা রামপুরা থানার আরেকটি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৬ জন নেতা-কর্মীকে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী গতকাল এই রায় দেন। মামলার এজাহার অনুযায়ী, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল করেন। তাঁদের হাতে ছিল লাঠি, রড ও ককটেল। আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘বৃষ্টির মতো’ ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে পুলিশের চার সদস্য আহত হন।

মামলাটিতে গত ৩০ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এতে ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৭ জনকে আদালতে হাজির করে। এঁদের মধ্যে ছয়জন পুলিশ সদস্য। আত্মপক্ষসমর্থন ও যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গতকাল রায় ঘোষণা করেন আদালত।

রমনা থানার মামলা

২০১৩ সালে রাজধানীর শান্তিনগরে ককটেল বিস্ফোরণের একটি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের সাতজন নেতা-কর্মীকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার সিএমএম আদালতের এসিএমএম মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিন গতকাল এই রায় দেন।

রাজনৈতিক মামলায় সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার বিএনপির আন্দোলন দমন ও রাজনীতি থেকে নেতাদের দূরে রাখতে চাইছে বলে মনে করেন দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল। তিনি সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাজার ব্যবস্থা করতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার।