চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ জন সমন্বয়ক। গণ–আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম এখানে কথা বলেছেন তাঁরা।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ জন সমন্বয়ক। গণ–আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম এখানে কথা বলেছেন তাঁরা।

ফ্যাসিবাদের দোসর–সমর্থক কেউ সরকারে থাকতে পারবেন না, বলছেন সমন্বয়কেরা

ছাত্র-জনতা মিলে অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এই ছাত্র–জনতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি রূপরেখা জাতিরর সামনে উপস্থান করা হবে। সেখানে ফ্যাসিবাদীদের দোসর–সমর্থক কেউ এই জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে আজ সোমবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর সন্ধ্যায় প্রথম একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কথা বলেছেন নাহিদ ইসলামসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ জন সমন্বয়ক।

সমন্বয়কেরা বাংলাদেশের সামগ্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন চান উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক বা আরেকটি শেখ হাসিনার জন্ম না হয়, সেই ব্যবস্থা তাঁরা প্রতিষ্ঠা করতে চান।

সেখানে আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেমন হবে, সে বিষয়ে রাত আটায় কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারায় সংবাদ সম্মেলন করে একটি রূপরেখা তাঁরা তুলে ধরবেন। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় যেদিন এক দফার ঘোষণা দেওয়া হয়, সেদিনই তাঁরা বিজয় সুনিশ্চিত ভেবেছিলেন। যত দিন তাঁদের সব দাবি পূরণ না হবে, তত দিন তাঁরা রাজপথে থাকবেন।

গণ–আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম একটি টেলিভিশনে কথা বলেছেন নাহিদ ইসলামসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ জন সমন্বয়ক

নিজেদের দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই গত ১৬ বছরে যত রাজনৈতিক নেতা–কর্মীকে কারান্তরিণ করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সমন্বয়কেরা জানান, তাঁরা দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চান। সবকিছুর পুনর্গঠন করা হবে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক সরকার উপহার দিতে হবে।

আন্দোলন সফল করার জন্য বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে কৃতিত্ব দেন আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা হয়তো শুরু করেছিলাম, কিন্তু সাধারণ মানুষের উপস্থিতি না হলে এটা সম্ভব হতো না।’ সকালেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চাঁনখারপুল এলাকায় সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে আসিফ বলেন, সেখানে সমন্বয়কদের দিকেও তাক করে গুলি ছোড়া হয়েছে। ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন বলে তাঁরা এখানে আসতে পেরেছেন। এই আন্দোলন আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণের কারণেই সফল হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ যেন রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ভাঙচুর ও লুটপাট করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ছাত্র–জনতার প্রতি আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে থাকতে হবে চূড়ান্ত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত। রাষ্ট্রীয় সম্পদ জনগণের, তা রক্ষা করতে হবে। কেউ যেন লটুপাটের সুযোগ না পায়।