হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর নোয়াখালীর চাটখিল থানা। আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়
হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর নোয়াখালীর চাটখিল থানা। আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানায় হামলা-আগুন, ২ পুলিশসহ নিহত ৫

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সোনাইমুড়ীতে পুলিশের গুলিতে অন্তত তিনজন ব্যক্তি ও দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও অর্ধশত মানুষ। আজ সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, সোনাইমুড়ী থেকে গুলিবিদ্ধ তিনজনের লাশ হাসপাতালে আনা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেশ কিছু মানুষ চিকিৎসাধীন।

জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বলেন, সোনাইমুড়ীতে ২৭ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের একজন সদস্যও রয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর থেকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী আনন্দ–উল্লাস করতে সোনাইমুড়ী উপজেলা সদরের রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁরা সোনাইমুড়ী বাজার, সোনাইমুড়ী বাইপাস এলাকা দখলে নিয়ে আনন্দমিছিল করতে থাকেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আনন্দমিছিল থেকে একটি দল সোনাইমুড়ী থানার দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় থানার ভেতর থেকে পুলিশ গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হন। এরপর উত্তেজিত জনতা সংঘবদ্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে হামলা-ভাঙচুর চালালে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। হামলার এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন।

চাটখিলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেল পাঁচটার দিকে এক দল বিক্ষোভকারী আনন্দমিছিল নিয়ে চাটখিল থানায় হামলা চালান। থানা ভবনের ভেতরে প্রায় প্রতিটি কক্ষে হামলা-ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, হামলার সময় থানার ভেতরে আটকে পড়েন পুলিশের তিন সদস্য। তাঁরা ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন তাঁদের উদ্ধার করেন। হামলাকারীরা থানার কম্পাউন্ডে থাকা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটার প্রশিক্ষণের একটি গাড়িও পুড়িয়ে দেন।

নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানায় বিক্ষোভকারীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে রাত নয়টার দিকে তিনি বলেন, চাটখিলে পুলিশের কোনো সদস্য হতাহত হননি। তবে সোনাইমুড়ীতে পুলিশের উপপরির্দশক মোহাম্মদ বাছির ও একজন কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের অন্য সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, সোনাইমুড়ী থানায় আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গেছে। বিক্ষোভকারীদের আগুনে থানার নথিপত্র ও আসবাবের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চাটখিলেও সেনাবাহিনী পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও আলাপ করা হচ্ছে।